শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

কবিতা >> পরম্পরা : তুহিন দাস

পরম্পরা

তুহিন দাস

সন্ধ্যার একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ঠোঁটে তুলে পাখি উড়ে যাচ্ছে
মুুহূর্তের প্রেরণায়,
যারা দিনভর গাঁইতি কোদালের কোপে মূর্তি গড়ছিলো ওদের হৃদয়েও
মুচড়ে উঠছে পাথর,
ঠিক এসময় ধূলোবালি গোটা এক পাক খেয়ে আসে
পুরোটা শহর,
বাড়ি ফেরার অস্থিরতায় মেশা মুখগুলো নিঃস্তেজ ও বন্দি
ভাঙাচোরা বাসগুলোতে,
তখনই যুবকেরা মাঠে গোল হয়ে বসে ফাটিয়ে ফেলে
গাঁজার বীজ,
এক টুকরো দড়ির উপর অপ্রতিরোধ্য কসরতে নামে খেলা দেখানো
সার্কাসবালক,
একটা কাঠঠোকরা নিজের ছায়া ঠুকতে ঠুকতে খোড়লে
ঢুকে পড়ে,
ফুটপাতের দোকানে চায়ের কাপে শেষ চুমুক মেরে রাস্তায়
চলে আসে লুটেরাদের দল,
আযানের সঙ্গে সঙ্গে অন্ধ ভিক্ষুকের পাত্রে
ছোঁড়া পয়সাধ্বনি,
বুনো শুয়োরের পালের মতো গাড়িগুলোর
এগিয়ে চলা,
শহরের স্যাঁতসেঁতে হাওয়ায় নিঃশ্বাস জ্যান্ত সাপের মতই
ভারি মনে হয়,
একশত বছর আগের যন্ত্র থেকে ফুঁসে ওঠা
হুইসেল,
দপ করে আলো জ্বলে উঠলো কোথাও
আকাশমুখো,
বাতাসে ভাসা পতিতাদের গানের
উচ্ছিষ্ট অংশ,
সন্ধ্যার জানালা টপকেই রজনীগন্ধার হু হু
মাতাল গন্ধ,
রাজপথে মিছিলের ব্যর্থ
আস্ফালন,
করিডোরে কারো হেঁটে যাবার
একঘেয়ে শব্দ,
হঠাৎ লোডশেডিঙয়ে বাতিদানে ছড়ানো
আলোর চুল,
কারো প্রতীক্ষায় অতিষ্ঠ
দুর্লভ সময়ের ভেঁপু,
একটি মেয়ে চুপচাপ ঢুকে পড়লো
ছাত্রীবাসে,
ছেলেটি হলুদ বাতির নিচে তখনো
হাওয়াইফোন কানে দাঁড়িয়ে,
শব্দাবলীতে জমে ওঠা এ সপ্তাহের
নাটকের আহ্লাদ,
ঘন ঘন হাততালিতে ব্যস্ত শৈল্পিক ও সক্রিয়
মানুষের হাত,
তখনো পার্কের একটু অন্ধকারে খুব দ্রুত খুলে নিচ্ছে
প্রেমের থেকেও আটসাঁট অন্ধকার,
মানুষ এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায়
পাগলের মতো ছুটছে,
আসলে কুয়াশার থেকে আর কিছুই
সত্য নয়,
পশুপাখিরা ওদের চোখগুলোকে
আধখোলা করে ফেলেছে,
ছায়াগুলো বেকুবের মত
লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে,
তাড়াহুড়ো করে রিকশা থেকে নামতে গিয়ে
একটা নখ উল্টেই গেলো,
তৃষ্ণার ভেতর দাঁত বের করে হাসছে
শুষ্ক ফুসফুস,
ওই তো আবারো কয়েকটি বাড়ির পরে রহস্যময়
আলোর সঙ্কেত,
নৈঃশব্দের ভাষা লিখতে এসে কবিকূল থেমে পড়ছে
ভূতের মতো,
শুধুই ধমনীতে রক্তের চলাচল ছাড়া আর কোনো
কৃতি নেই,
সিঁড়ির গোড়ায় পড়ে আছে
আধখাওয়া ডালিমফল,
সান্ধ্যকালীন আড্ডায় কবিদের সঙ্গমকাহিনী বুঝছি
এক নারীতে উপগত সকলে,
স্বপ্নকে কেটে ফালাফালা করে দিচ্ছে কার
প্রশংসনীয় তলোয়ার,
অথচ কেউ একজন জিরাফকান তুলে বুদ্ধধ্যানে বসে আসে

অস্তপারের সন্ধ্যাবেলায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন