গল্পের রাজাদের কত আজগুবি খেয়াল থাকে। ছেলেবেলায় পড়া গল্পের সে রাজার মাথায়ও তেমনই এক খেয়াল চাপলো। না, হাতি ঘোড়া-পোষার খেয়াল নয়। সকলের চোখ কপালে তুলে না দিতে পারলে কীসের রাজা আর কীসের খেয়াল! রাজার মাথায় খেয়াল চাপলো আলসে পোষার। দেশের সেরা আলসে লোকগুলোকে একখানে এনে খাইয়ে দাইয়ে রাখতে পারলে তবেই না অন্য রাজাদের সাথে ‘দেমাগ’ দেখানো যাবে!
রাজার খেয়াল বলে কথা! সাথে সাথে রাজবাড়ির সামনে তৈরি হলো এক বিশাল আলসেখানা। সেই আলসেখানায় ঠাঁই হলো হরেক কিসিমের আলসে লোকের। কেবল আলসেরাই নয় রাজ্যের সকল লোকই বিনে পয়সায় থাকা খাওয়ার সুযোগ নিতে আলসে সেজে জড়ো হতে লাগলো সেখানে। রাজা তো মহা মুশকিলে পড়লেন। এদের খাবার-দাবার যোগাড়ে তহবিলে টান পড়তে শুরু করলো। উপায় না দেখে উজিরের সাথে পরামর্শ করলেন। উজিরের পরামর্শে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হলো আলসেখানায়। উজিরের যুক্তি, এতে নকল আলসেরা পালিয়ে যাবে। হলোও তাই। আলসেখানায় আগুন লাগামাত্র দুদ্দাড় করে নকল আলসেরা পালিয়ে গেলো। কেবল দুই আলসে তখনও ঘুমিয়ে। ঘর জ্বলতে জ্বলতে আগুন তখন তাদের পিঠের কাছে। তখনই কেবল ঘুমের রেশ ভাঙে তাদের।
রাজার আলসেখানায় সব শেষে দুজনের বেশি আলসে লোক মেলেনি। তবে ভাগ্যিস একালের আমাদের নাগাল পাননি কল্পকথার সে রাজা। আমাদের নাগাল পেলে ফতুর বোধহয় তাকে হতেই হতো। আমাদের ঘুম যে আগুনে ঘর পুড়ে গেলেও ভাঙে না। সব জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও আমরা চোখ মেলতে রাজি নই। আর সব চুলোয় যাক, নিজেরা যে বেঁচে আছি এই ঢের।
নিজেদের নিয়ে এই বেঁচে থাকার আসলেই কি কোনো মানে আছে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন