মুহম্মদ তোবারক আলী
বহুদিন পর আজ শরতের স্নিগ্ধ সকালে বসে
তোমায় লিখছি চিঠি - কেমোন আছো মাগো?
পুকুর পাড়ের লম্বা সেই ঘরটায় অগোছালো সব পড়ে আছে
তৌহিদের মা’র সাথে এখনো যায়নি চুকে সব লেনদেন
জিতুর মায়েরা সব ভালো আছে, গুনিয়াক মাজারের খাদিম
এনুছ সাহেব তিনিও।
নতুন চৌকির নীচে মুরগীর খাঁচা বানিয়েছে রোজি
এখনো নামাজের সময় হলে বাবা তোমার বিছানা খোঁজেন।
রোজিমা কান্নায় তাঁর কণ্ঠ ধরে বলে : বাবা,
ওভাবে কাঁদতে নেই, দেখোনা সবাই কেমোন দিনকে দিন
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে।
মৃত্যুকে নিতেই হবে সঙ্গী করে পালাবার পথ নেই।
কী যে মৃত্যু ছিলো মা’র! ভাবতে পারিনা এমোন সাজানো সংসার
দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে রেখে যাবে এক রাশ কান্না! স্মৃতি! দুঃখ!!
ব্যথা!!!
জানো মা, তোমার সেই বড় ছেলে মানে নূর হোসাইন
যার বিয়ে হয়েছে তোমারি পছন্দের মাহমুদার সাথে।
কেবোল ছ’ মাস হলো তাদের একটি মেয়েও হয়েছে
সবাই আদর করে ওকে শারমিন বলে ডাকে।
আর আদরের সেই মেয়ে নাজমার কথা?
কাঁদতে কাঁদতে তার চোখ দু’টো নদী হয়ে গেছে।
দেখতে পাওনা জানি আমি কত রোগা হয়ে গেছি।
তোমার ছেলেটি মা, মাগো!
তোমার পুরোনো শাড়ি, পানদান্, তামাকের ছোট্ট টিন, জুতো জোড়া
বালিশে ভেজানো চোখ টলটলে একাকার।
দক্ষিনে জানালা খুলে এখনো তোমার পায়ের শব্দ শুনি
লোবানের ঘ্রাণ আসে; বাতাসে কীসের সুর যেনো ওঠে।
এভাবে সকাল আসে দিন যায়
রাতগুলো অঘুমো কাটাই
লিখবো লিখবো করে কিছু পুরোনো কবিতার প্লট
প্রায়শঃ হারিয়ে যাচ্ছে, লিখতে পারছি না আর কিছুতেই।
ক্রমশঃ আড়াল হচ্ছে লেখালেখি সব কিছু
এমোন কি আমরাও।
তুমি তো প্রবাসে আছো, সব তাই দেখতে পাও না মা!
>> পথিক ১৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন