সম্পর্ক
সালমান রুশদী (লায়লা ফেরদৌস ইতু)
প্রফেসর মালিক সোলাঙ্কার তৈরি করা পুতুলগুলো, তার সেই প্রথম দিককার চরিত্রগুলো অবয়ব পেতো ছোট ছোট কাঠের টুকরো, কাপড় আর তুলা দিয়ে। বিভিন্ন রং দিয়ে এসব চরিত্রের চেহারা ফুটিয়ে তোলা হতো, সেসব চেহারায় আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক ইঙ্গিতও থাকতো। এরপর এসব চরিত্ররা তাদের এই ক্ষুদ্র শরীর আর চেহারা ছাড়িয়ে বিশাল রূপ ধারণ করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁর সন্তানদেরকে তিনি মাটি দিয়ে গড়ে তুলবেন। কারণ- ঈশ্বর, যিনি আসলে কোথাও নেই, তিনিও তাঁর সন্তানদেরকে গড়েছেন মাটি দিয়ে। অথচ এখানে তাঁর কৌতুক শেষ করেননি। মানুষ তাঁর কল্পনার অংশ, অথচ মানুষের জীবন ভীষণরকম বাস্তব। এখানে কল্পনার কোনো স্থান তিনি রাখেননি।
যাই হোক, এসব পুতুলগুলো তাঁর জন্য ছিলো বাস্তব। তিনি এদেরকে তৈরি করতেন, এদের ইতিহাস জানতেন, এদের বেঁচে থাকা দেখতে পছন্দ করতেন এবং এদেরকে ভালোবাসতেন। এদের মনস্তত্ব এবং ইতিহাস নিয়েই তাঁর ভাবনা আবর্তিত হতো অথচ বাইরে থেকে দেখলে মনে হতো শুধু তিনি পুতুলই খেলছেন। এ সমস্ত পুতুলের মধ্যে একটা পুতুলকে তিনি খুব বেশি ভালোবাসতেন, তার নাম তিনি রেখেছিলেন ‘লিটল ব্রেইন’। লিটল ব্রেইন পুতুল থেকে পাপেট, পাপেট থেকে কার্টুন, কার্টুন থেকে দর্শকদের প্রিয় মুখে পরিণত হয়। তিনি অনুভব করতেন ‘লিটল ব্রেইন’ তাঁকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি কি তাহলে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন টাইপের কিছু একটা জন্ম দিয়েছিলেন? তাঁর নিজের ধ্বংসের সূত্রপাত কি তাহলে তাঁর ভালোবাসার সন্তান ‘লিটল ব্রেইন’ই করেছিলো?
মালিক সোলাঙ্কা কোনো দিনই ভাববিলাসী ছিলেন না, বরং ভীষণরকম মেধাবী ছিলেন। ছিলেন ইতিহাসের অধ্যাপক, পুতুল তৈরি করাটা ছিলো তাঁর শখ। হঠাৎ একদিন তিনি তাঁর নিজের মাঝে এক অদম্য উন্মাদনা অনুভব করেন, অনুভব করেন তিনি তাঁর ভালোবাসার মানুষদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। তিনি গভীর রাতে স্ত্রী-ছেলেকে খুন করতে তাদের রূমে ঢুকে পড়েন। ভাগ্যিস, ওরা সেটা দেখতে পায়নি। ডাক্তার রায় দেয়, তাঁর মাঝে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সুতরাং, তিনি স্ত্রী-সন্তানকে ত্যাগ করে আমেরিকায় চলে আসেন। কারণ, আমেরিকা সব সময়ই স্বর্গস্বরূপ, এর অর্থ আর ক্ষমতার স্রোত সব রকম আক্রোশ ভুলিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে।
‘ফিউরি’ চার অরের একটি চমৎকার শব্দ। অভিধানে এর অর্থ লেখা হয়েছে, অসহ্য ক্রোধ, অদম্য উন্মাদনা, মারাত্মক আক্রোশ কিংবা অপ্রতিরোধ্য পাগলামি। আর পুরাণ বলছে, মানব সভ্যতার সূচনা কালে ইউরেনাস, যার অর্থ আকাশ, তিনি পাহাড়ের উপর থেকে পৃথিবী মাতার দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকালে সেই দৃষ্টি বৃষ্টিরূপে ঝরে পড়েছিলো । তাতে পৃথিবী মাতা গর্ভবতী হয়ে পড়েন এবং তার গর্ভ থেকে তখন মানুষ, গাছ-পালা, জীব-জন্তু সব বেরিয়ে আসে। আর তার শরীরের উঁচু-নিচু খাঁজগুলো বৃষ্টিতে পরিপূর্ণ হয়ে গড়ে ওঠে নদী-সাগর আর বিভিন্ন জলাশয়।
পৃথিবী মাতার সন্তানদের মাঝে সাইকোপস ছিলো খুবই দুষ্টু। এ কারণে ইউরেনাস তাকে পাতালপুরীতে আটকে রেখেছিলেন। এতে পৃথিবী মাতা নিজেও খুব মনঃক্ষুণ্ন হন এবং অন্য সন্তানদেরকে তাদের বাবার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন। এসব বিদ্রোহী সন্তানদের নেতৃত্ব দিয়েছিলো ক্রোনাস, তার অস্ত্র ছিলো একটি ছোট কাস্তে। সব বিদ্রোহী সন্তানরা তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় আটক করে এবং ক্রোনাস তার সেই কাস্তে দিয়ে বাবার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে, যাতে আর কখনো ইউরেনাস তার বংশ বিস্তার করতে না পারে। সে সময় ইউরেনাস এর তস্থান থেকে ঝরে পড়া রক্ত পৃথিবী মাতার উপর পড়তেই তিনি গর্ভ ধারণ করেন এবং ইলেকটো, থিসিফোন, মেগেরা নামে তিন অতি প্রতিহিংসাপরায়ণ দেবীর জন্ম দেন। এদের কাজ হলো ভীষণ রকম উন্মাদ হয়ে অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয়া। এদেরকে একত্রে ‘ফিউরি’ ডাকা হয়।
সুতরাং, যার উপর ফিউরি ভর করে সে হয়ে পড়ে অযৌক্তিক রকম উন্মাদ, অদম্য এক অস্থিরতা তাকে কুরেকুরে খায়। প্রফেসর মালিক সোলাঙ্কার উপরও এখন ফিউরি ভর করেছে। সিজোফ্রেনিয়া আবার কী? আর তার সন্তান ‘লিটল ব্রেইন’ও কি তার সুস্থ মন- মানসিকতা সম্পন্ন পিতার স্বাভাবিক সত্তার হত্যার প্রতিশোধ নেবে? নতুবা সে কেনো মনুষ্য শরীর ধারণ করে এই মিলা নামের মেয়েটির মাধ্যমে তার জীবনের সাথে যুক্ত হলো?
প্রফেসর তার ‘লিটল ব্রেইন’কে গড়ে তুলেছিলেন ঠিক একটি কন্যা সন্তানকে গড়ে তোলার মতো করে। এদিকে মিলাও এমন এক কন্যা সন্তান, যার বাবা ছিলেন একজন কবি। তিনি বসবাস করতেন কল্পনার জগতে এবং সেই জগতে মিলাই ছিলো তার একমাত্র সঙ্গী ও সহকারী। হয়ত এ কারণেই মিলা এতো সহজে তার মাঝে ‘লিটল ব্রেইন’কে ধারণ করতে পেরেছিলো ।
এদিকে প্রফেসর মালিক সোলাঙ্কা, যার ভেতরে এক অসম্ভব অস্থিরতা, যিনি জানেন না তাঁকে কী করতে হবে কিংবা তিনি আসলে ঠিক কী করছেন। তিনি শুধু বুঝতে পেরেছিলেন যে বেঁচে থাকার জন্যই কেবল তাঁর একটা অবলম্বন দরকার। কল্পনার জগতে বিচরণ করতে করতে নিজের জীবনটুকু যাপন করে যাবার জন্য তার একজন বিশ্বাসযোগ্য সহযাত্রী দরকার। নিজের বোধকে প্রকাশের মাধ্যমে দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য তাঁর একজন সঙ্গী দরকার । তিনি কি তাহলে মিলাকে আঁকড়ে ধরবেন না? এক অসহায় পিতা কি তার অস্তিত্বের জন্য কন্যার মুখাপেক্ষী নয়?
‘আপনার চোখগুলো আমার বাবার চোখের মতো’ পরিচয়ের পরপরই মিলার এই উক্তি তাঁকে প্রশান্তি দেয়। তিনি ভাবতে পারেন যে, মেয়েটা তার মাঝে মৃত বাবার ছায়া খুঁজে পাচ্ছে, পিতৃহীন এক সন্তান তাঁর মাঝে হারানো পিতৃত্বের স্বাদ অনুসন্ধান করছে। সম্পর্কটা এর বেশি কিছু নয়।
তিনি এখন বৃদ্ধ। মিলা তাকে সুরক্ষা দেবে, তাকে এক অলৌকিক পিতৃত্বের স্বাদ দেবে, কোনো দিন অনুভব করতে না পারা আনন্দের অধিকারী করবে। এর বেশি কিছু কি তাঁর প্রত্যাশা ছিলো? না কি থাকা উচিত? কিন্তু মিলার হাসিতে যদি কন্যাসুলভ আবেগের চেয়ে বেশি কিছু প্রকট হয়ে ওঠে তাহলে তিনি কী করবেন? বিশাল এ পৃথিবীতে তো তাঁর কোথাও কিছু পাওয়ার নেই, কিছু চাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। অথচ মিলা তাঁকে যা দিচ্ছে তা তো তিনি ফেলতেও পারছেন না, কিংবা তিনি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না যে তিনি এই বিষয়টা চান না। তাহলে কি তিনিও ভেতরে ভেতরে এই বিষয়টার জন্য, ঐ অজানা শিহরণের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে উঠেছিলেন?
‘প্রফেসর, আপনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। মনে হয় যেনো আমার বাবার সাথে কথা বলছি। আপনারও যখনই কথা বলতে ইচ্ছা করবে আমাকে ডাকবেন।’ এভাবেই এক বৃষ্টিঝরা বিকেলে নিস্তব্ধ এক আধো অন্ধকার কামরায় তাদের বাবা-মেয়ে খেলার সূত্রপাত হয়েছিলো । মিলা ছিলো একটা জীবন্ত পুতুল, একটা কথা বলতে পারা ‘লিটল ব্রেইন’। তিনি পুতুল নিয়ে খেলতে আনন্দ পেতেন, এর ভাবনার সাথে একাত্ম হতে পারতেন, এর আচার-আচরণ দেখে সুখী হতেন। একে কি পাপ বলা যাবে?
মিলা সব সময় তাঁর কোলে মাথা রেখে বসে থাকতো। তার বুক তখন তাঁর পায়ের সাথে লেগে থাকতো। তিনি তাই তাঁর পায়ের উপর একটা বালিশ রেখে দিতেন। কারণ একটা পরিণত নারী শরীরের স্পর্শে তাঁর দেহে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেটা তাঁর কন্যা বুঝে ফেলুক সেটা তিনি চাইতেন না। কন্যাও সেটা বুঝত না, তাই তাঁর পায়ের ওপর তার বুকের চাপ বাড়তে শুরু করেছিলো ।
একদিন চুপিসারে তাঁর শার্টের বোতাম খুলে মিলার ঠোঁট ঢুকে পড়ে তাঁর হাহাকার ভরা পাঁজরের কাছে। বাইরে তখন দিনের আলো ফিকে হয়ে গুটিগুটি পায়ে সন্ধ্যা নামছে আর ঘরের ভেতর এক অপার্থিব কন্যা সন্তান অনাবৃত করছে তার পিতার গোপন করে রাখা বেদনার জগত, শুষে নিচ্ছে পিতার ভেতরে প্রবহমান সেই কষ্টের জলপ্রপাত। অথচ তাদের মাঝে তখন কোনো রকম বাক্য বিনিময় হচ্ছিলো না, সেটা অবশ্য হয়নি কোনো দিনই। ভাষা আসলেই একটি অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ মাধ্যম। কেউই ভাষার সাহায্যে সত্যিকার অর্থে কোনো কাজ করতে পারে না। আবার ছোট-বড় সবারই খেলার জন্য একটি পুতুল প্রয়োজন।
মিলা জিহ্বা দিয়ে প্রফেসরের বুক ছুঁয়ে বলেছিলো, ‘আপনি সময় নিন। তাড়া-হুড়ো করার কী দরকার? আমি কোথাও পালাচ্ছি না। কিংবা কেউ এসে আমাদেরকে মাঝ পথে থামিয়েও দেবে না। আমি তো আপনারই হাতে গড়া পুতুল। আপনি শুধু মনে রাখুন কীভাবে খেলতে হয়।’
মিলা বাস্তবে ছিলো একটা মাকড়সা, যার শক্ত জালে পতঙ্গের মতো আমাদের এই বিজ্ঞ ইতিহাসের প্রফেসর ফেঁসে যাচ্ছিলেন। ‘আমি আর আমার বাবা সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, এক সাথে, এক হয়ে।’ তো, আজ কি প্রফেসরের সাথে তার এক হবার পালা? মৃত বাবার ভূমিকায় প্রফেসরের স্থলাভিষেক কি নিয়তি? তাঁর ঝরে পড়া অশ্রু শুষে নেয়ার কাজটা যে মেয়ে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে তাকে কি কন্যা ছাড়া আর কিছু ভাবা যায়? কন্যারা কি এভাবেই তাদের বাবাদের ভালোবাসা না পাবার যন্ত্রণাময় ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেয়?
আচ্ছা, মিলার বাবাও কি তাঁর মতো অনাবিষ্কৃত পৃথিবী আবিষ্কারের পাপ করেছিলেন? এভাবেই কি মানুষের কাছে গচ্ছিত স্বচ্ছ আত্মাগুলো নরকের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে?
‘না, আগেও কিছু ঘটেনি, আর এখনও কিছু ঘটছে না।’ মিলার একথা শুনে তিনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন এ কারণে যে, তাঁর কোনো জৈবিক কন্যা সন্তান নেই। মিলা তাঁর কন্যা নয়, শুধু কন্যার মতো। তিনি এই মেয়ের প্রেমিক নন, কিন্তু প্রেমিকের মতো। তাদের সম্পর্কটা যৌনতা ভিত্তিক নয়, আবার যৌনতামুক্ত বলে বুকে হাত রেখে দাবিও করা যাবে না। এ সম্পর্ক পাপের নয়, আবার পুরোপুরি নিষ্পাপও নয়। তাঁদের মাঝে কোথাও কোনো আড়াল নেই। সম্পূর্ণ সততার উপর প্রতিষ্ঠিত এ সম্পর্কের পরিণতিই বা কী? এও কি তাহলে শুধু ফিউরির অভিশাপ?
প্রফেসর কি স্বীকার করবেন? তিনি নিজেই কি বুঝতে পারছেন কী ঘটছে, কেনো ঘটছে? যেদিন মিলা তাঁর ঘাড়ের ওপর ঠোঁট রেখে সমস্ত বেদনা, জীবনব্যপী তাড়া করা অভিশাপ, কষ্টের উচ্চারণ শুষে নিচ্ছিলো, তখন তাঁর মনে হচ্ছিলো যেনো এই মেয়েই সেই ফিউরি, যে নিতান্ত প্রতিহিংসাবশত তাঁর অস্থির ভাবে ফুটন্ত রক্ত পান করছে। অথচ কী অদ্ভুত, ঠিক তখনই তিনি তাঁর অভ্যস্ত সেই পুরনো খেলার নিয়মটা মনে করতে পারলেন। ‘আপনার ভেতর এতোদিন ধরে যে জিনিসটা অপেক্ষা করছে, মুক্তির আশায় প্রহর গুনছে, যার চাপে আপনি নিজেও এতোটাই জর্জরিত, তাকে আজই কাজে লাগান। আপনি লিটল ব্রেইনের জন্মদাতা, আপনি এটা পারবেন। হ্যাঁ, এভাবেই আপনি নির্ভার হোন।’
সেদিন থেকে প্রফেসর অনুভব করতে শুরু করেছেন অন্য এক উন্মাদনা। তাঁর ভেতরে সেদিনই গড়ে উঠেছে অন্য এক পৃথিবী, অন্য এক কল্পনার মোহাচ্ছন্ন মায়াজাল। মিলার কাছে তিনি কৃতজ্ঞ, কারণ এই অপার্থিব কন্যাটি তাকেও এক অপার্থিব আনন্দের শিক্ষা দিয়েছে। তাঁকে দিয়েছে বর্ণনার অতীত নতুন এক সম্পর্কের স্বাদ, নতুন রকম শ্বাসকষ্টের অভিজ্ঞতা, নতুন প্রকরণের সিজোফ্রেনিয়ার দুর্ভোগ। পৃথিবীতে তো কতো নাম না জানা সম্পর্কই গড়ে ওঠে, কতো অদ্ভুত অবস্থানে মানুষ নিজেকে মানিয়ে নেয়। কিন্তু নিজের মনে সততা থাকলে কোনো সম্পর্কই পাপ নয়। সেই সম্পর্কের কোনো নাম নাইবা দেয়া গেলো.....
সালমান রুশদী (লায়লা ফেরদৌস ইতু)
প্রফেসর মালিক সোলাঙ্কার তৈরি করা পুতুলগুলো, তার সেই প্রথম দিককার চরিত্রগুলো অবয়ব পেতো ছোট ছোট কাঠের টুকরো, কাপড় আর তুলা দিয়ে। বিভিন্ন রং দিয়ে এসব চরিত্রের চেহারা ফুটিয়ে তোলা হতো, সেসব চেহারায় আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক ইঙ্গিতও থাকতো। এরপর এসব চরিত্ররা তাদের এই ক্ষুদ্র শরীর আর চেহারা ছাড়িয়ে বিশাল রূপ ধারণ করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁর সন্তানদেরকে তিনি মাটি দিয়ে গড়ে তুলবেন। কারণ- ঈশ্বর, যিনি আসলে কোথাও নেই, তিনিও তাঁর সন্তানদেরকে গড়েছেন মাটি দিয়ে। অথচ এখানে তাঁর কৌতুক শেষ করেননি। মানুষ তাঁর কল্পনার অংশ, অথচ মানুষের জীবন ভীষণরকম বাস্তব। এখানে কল্পনার কোনো স্থান তিনি রাখেননি।
যাই হোক, এসব পুতুলগুলো তাঁর জন্য ছিলো বাস্তব। তিনি এদেরকে তৈরি করতেন, এদের ইতিহাস জানতেন, এদের বেঁচে থাকা দেখতে পছন্দ করতেন এবং এদেরকে ভালোবাসতেন। এদের মনস্তত্ব এবং ইতিহাস নিয়েই তাঁর ভাবনা আবর্তিত হতো অথচ বাইরে থেকে দেখলে মনে হতো শুধু তিনি পুতুলই খেলছেন। এ সমস্ত পুতুলের মধ্যে একটা পুতুলকে তিনি খুব বেশি ভালোবাসতেন, তার নাম তিনি রেখেছিলেন ‘লিটল ব্রেইন’। লিটল ব্রেইন পুতুল থেকে পাপেট, পাপেট থেকে কার্টুন, কার্টুন থেকে দর্শকদের প্রিয় মুখে পরিণত হয়। তিনি অনুভব করতেন ‘লিটল ব্রেইন’ তাঁকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি কি তাহলে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন টাইপের কিছু একটা জন্ম দিয়েছিলেন? তাঁর নিজের ধ্বংসের সূত্রপাত কি তাহলে তাঁর ভালোবাসার সন্তান ‘লিটল ব্রেইন’ই করেছিলো?
মালিক সোলাঙ্কা কোনো দিনই ভাববিলাসী ছিলেন না, বরং ভীষণরকম মেধাবী ছিলেন। ছিলেন ইতিহাসের অধ্যাপক, পুতুল তৈরি করাটা ছিলো তাঁর শখ। হঠাৎ একদিন তিনি তাঁর নিজের মাঝে এক অদম্য উন্মাদনা অনুভব করেন, অনুভব করেন তিনি তাঁর ভালোবাসার মানুষদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। তিনি গভীর রাতে স্ত্রী-ছেলেকে খুন করতে তাদের রূমে ঢুকে পড়েন। ভাগ্যিস, ওরা সেটা দেখতে পায়নি। ডাক্তার রায় দেয়, তাঁর মাঝে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সুতরাং, তিনি স্ত্রী-সন্তানকে ত্যাগ করে আমেরিকায় চলে আসেন। কারণ, আমেরিকা সব সময়ই স্বর্গস্বরূপ, এর অর্থ আর ক্ষমতার স্রোত সব রকম আক্রোশ ভুলিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে।
‘ফিউরি’ চার অরের একটি চমৎকার শব্দ। অভিধানে এর অর্থ লেখা হয়েছে, অসহ্য ক্রোধ, অদম্য উন্মাদনা, মারাত্মক আক্রোশ কিংবা অপ্রতিরোধ্য পাগলামি। আর পুরাণ বলছে, মানব সভ্যতার সূচনা কালে ইউরেনাস, যার অর্থ আকাশ, তিনি পাহাড়ের উপর থেকে পৃথিবী মাতার দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকালে সেই দৃষ্টি বৃষ্টিরূপে ঝরে পড়েছিলো । তাতে পৃথিবী মাতা গর্ভবতী হয়ে পড়েন এবং তার গর্ভ থেকে তখন মানুষ, গাছ-পালা, জীব-জন্তু সব বেরিয়ে আসে। আর তার শরীরের উঁচু-নিচু খাঁজগুলো বৃষ্টিতে পরিপূর্ণ হয়ে গড়ে ওঠে নদী-সাগর আর বিভিন্ন জলাশয়।
পৃথিবী মাতার সন্তানদের মাঝে সাইকোপস ছিলো খুবই দুষ্টু। এ কারণে ইউরেনাস তাকে পাতালপুরীতে আটকে রেখেছিলেন। এতে পৃথিবী মাতা নিজেও খুব মনঃক্ষুণ্ন হন এবং অন্য সন্তানদেরকে তাদের বাবার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন। এসব বিদ্রোহী সন্তানদের নেতৃত্ব দিয়েছিলো ক্রোনাস, তার অস্ত্র ছিলো একটি ছোট কাস্তে। সব বিদ্রোহী সন্তানরা তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় আটক করে এবং ক্রোনাস তার সেই কাস্তে দিয়ে বাবার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে, যাতে আর কখনো ইউরেনাস তার বংশ বিস্তার করতে না পারে। সে সময় ইউরেনাস এর তস্থান থেকে ঝরে পড়া রক্ত পৃথিবী মাতার উপর পড়তেই তিনি গর্ভ ধারণ করেন এবং ইলেকটো, থিসিফোন, মেগেরা নামে তিন অতি প্রতিহিংসাপরায়ণ দেবীর জন্ম দেন। এদের কাজ হলো ভীষণ রকম উন্মাদ হয়ে অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয়া। এদেরকে একত্রে ‘ফিউরি’ ডাকা হয়।
সুতরাং, যার উপর ফিউরি ভর করে সে হয়ে পড়ে অযৌক্তিক রকম উন্মাদ, অদম্য এক অস্থিরতা তাকে কুরেকুরে খায়। প্রফেসর মালিক সোলাঙ্কার উপরও এখন ফিউরি ভর করেছে। সিজোফ্রেনিয়া আবার কী? আর তার সন্তান ‘লিটল ব্রেইন’ও কি তার সুস্থ মন- মানসিকতা সম্পন্ন পিতার স্বাভাবিক সত্তার হত্যার প্রতিশোধ নেবে? নতুবা সে কেনো মনুষ্য শরীর ধারণ করে এই মিলা নামের মেয়েটির মাধ্যমে তার জীবনের সাথে যুক্ত হলো?
প্রফেসর তার ‘লিটল ব্রেইন’কে গড়ে তুলেছিলেন ঠিক একটি কন্যা সন্তানকে গড়ে তোলার মতো করে। এদিকে মিলাও এমন এক কন্যা সন্তান, যার বাবা ছিলেন একজন কবি। তিনি বসবাস করতেন কল্পনার জগতে এবং সেই জগতে মিলাই ছিলো তার একমাত্র সঙ্গী ও সহকারী। হয়ত এ কারণেই মিলা এতো সহজে তার মাঝে ‘লিটল ব্রেইন’কে ধারণ করতে পেরেছিলো ।
এদিকে প্রফেসর মালিক সোলাঙ্কা, যার ভেতরে এক অসম্ভব অস্থিরতা, যিনি জানেন না তাঁকে কী করতে হবে কিংবা তিনি আসলে ঠিক কী করছেন। তিনি শুধু বুঝতে পেরেছিলেন যে বেঁচে থাকার জন্যই কেবল তাঁর একটা অবলম্বন দরকার। কল্পনার জগতে বিচরণ করতে করতে নিজের জীবনটুকু যাপন করে যাবার জন্য তার একজন বিশ্বাসযোগ্য সহযাত্রী দরকার। নিজের বোধকে প্রকাশের মাধ্যমে দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য তাঁর একজন সঙ্গী দরকার । তিনি কি তাহলে মিলাকে আঁকড়ে ধরবেন না? এক অসহায় পিতা কি তার অস্তিত্বের জন্য কন্যার মুখাপেক্ষী নয়?
‘আপনার চোখগুলো আমার বাবার চোখের মতো’ পরিচয়ের পরপরই মিলার এই উক্তি তাঁকে প্রশান্তি দেয়। তিনি ভাবতে পারেন যে, মেয়েটা তার মাঝে মৃত বাবার ছায়া খুঁজে পাচ্ছে, পিতৃহীন এক সন্তান তাঁর মাঝে হারানো পিতৃত্বের স্বাদ অনুসন্ধান করছে। সম্পর্কটা এর বেশি কিছু নয়।
তিনি এখন বৃদ্ধ। মিলা তাকে সুরক্ষা দেবে, তাকে এক অলৌকিক পিতৃত্বের স্বাদ দেবে, কোনো দিন অনুভব করতে না পারা আনন্দের অধিকারী করবে। এর বেশি কিছু কি তাঁর প্রত্যাশা ছিলো? না কি থাকা উচিত? কিন্তু মিলার হাসিতে যদি কন্যাসুলভ আবেগের চেয়ে বেশি কিছু প্রকট হয়ে ওঠে তাহলে তিনি কী করবেন? বিশাল এ পৃথিবীতে তো তাঁর কোথাও কিছু পাওয়ার নেই, কিছু চাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। অথচ মিলা তাঁকে যা দিচ্ছে তা তো তিনি ফেলতেও পারছেন না, কিংবা তিনি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না যে তিনি এই বিষয়টা চান না। তাহলে কি তিনিও ভেতরে ভেতরে এই বিষয়টার জন্য, ঐ অজানা শিহরণের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে উঠেছিলেন?
‘প্রফেসর, আপনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। মনে হয় যেনো আমার বাবার সাথে কথা বলছি। আপনারও যখনই কথা বলতে ইচ্ছা করবে আমাকে ডাকবেন।’ এভাবেই এক বৃষ্টিঝরা বিকেলে নিস্তব্ধ এক আধো অন্ধকার কামরায় তাদের বাবা-মেয়ে খেলার সূত্রপাত হয়েছিলো । মিলা ছিলো একটা জীবন্ত পুতুল, একটা কথা বলতে পারা ‘লিটল ব্রেইন’। তিনি পুতুল নিয়ে খেলতে আনন্দ পেতেন, এর ভাবনার সাথে একাত্ম হতে পারতেন, এর আচার-আচরণ দেখে সুখী হতেন। একে কি পাপ বলা যাবে?
মিলা সব সময় তাঁর কোলে মাথা রেখে বসে থাকতো। তার বুক তখন তাঁর পায়ের সাথে লেগে থাকতো। তিনি তাই তাঁর পায়ের উপর একটা বালিশ রেখে দিতেন। কারণ একটা পরিণত নারী শরীরের স্পর্শে তাঁর দেহে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেটা তাঁর কন্যা বুঝে ফেলুক সেটা তিনি চাইতেন না। কন্যাও সেটা বুঝত না, তাই তাঁর পায়ের ওপর তার বুকের চাপ বাড়তে শুরু করেছিলো ।
একদিন চুপিসারে তাঁর শার্টের বোতাম খুলে মিলার ঠোঁট ঢুকে পড়ে তাঁর হাহাকার ভরা পাঁজরের কাছে। বাইরে তখন দিনের আলো ফিকে হয়ে গুটিগুটি পায়ে সন্ধ্যা নামছে আর ঘরের ভেতর এক অপার্থিব কন্যা সন্তান অনাবৃত করছে তার পিতার গোপন করে রাখা বেদনার জগত, শুষে নিচ্ছে পিতার ভেতরে প্রবহমান সেই কষ্টের জলপ্রপাত। অথচ তাদের মাঝে তখন কোনো রকম বাক্য বিনিময় হচ্ছিলো না, সেটা অবশ্য হয়নি কোনো দিনই। ভাষা আসলেই একটি অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ মাধ্যম। কেউই ভাষার সাহায্যে সত্যিকার অর্থে কোনো কাজ করতে পারে না। আবার ছোট-বড় সবারই খেলার জন্য একটি পুতুল প্রয়োজন।
মিলা জিহ্বা দিয়ে প্রফেসরের বুক ছুঁয়ে বলেছিলো, ‘আপনি সময় নিন। তাড়া-হুড়ো করার কী দরকার? আমি কোথাও পালাচ্ছি না। কিংবা কেউ এসে আমাদেরকে মাঝ পথে থামিয়েও দেবে না। আমি তো আপনারই হাতে গড়া পুতুল। আপনি শুধু মনে রাখুন কীভাবে খেলতে হয়।’
মিলা বাস্তবে ছিলো একটা মাকড়সা, যার শক্ত জালে পতঙ্গের মতো আমাদের এই বিজ্ঞ ইতিহাসের প্রফেসর ফেঁসে যাচ্ছিলেন। ‘আমি আর আমার বাবা সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, এক সাথে, এক হয়ে।’ তো, আজ কি প্রফেসরের সাথে তার এক হবার পালা? মৃত বাবার ভূমিকায় প্রফেসরের স্থলাভিষেক কি নিয়তি? তাঁর ঝরে পড়া অশ্রু শুষে নেয়ার কাজটা যে মেয়ে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে তাকে কি কন্যা ছাড়া আর কিছু ভাবা যায়? কন্যারা কি এভাবেই তাদের বাবাদের ভালোবাসা না পাবার যন্ত্রণাময় ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেয়?
আচ্ছা, মিলার বাবাও কি তাঁর মতো অনাবিষ্কৃত পৃথিবী আবিষ্কারের পাপ করেছিলেন? এভাবেই কি মানুষের কাছে গচ্ছিত স্বচ্ছ আত্মাগুলো নরকের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে?
‘না, আগেও কিছু ঘটেনি, আর এখনও কিছু ঘটছে না।’ মিলার একথা শুনে তিনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন এ কারণে যে, তাঁর কোনো জৈবিক কন্যা সন্তান নেই। মিলা তাঁর কন্যা নয়, শুধু কন্যার মতো। তিনি এই মেয়ের প্রেমিক নন, কিন্তু প্রেমিকের মতো। তাদের সম্পর্কটা যৌনতা ভিত্তিক নয়, আবার যৌনতামুক্ত বলে বুকে হাত রেখে দাবিও করা যাবে না। এ সম্পর্ক পাপের নয়, আবার পুরোপুরি নিষ্পাপও নয়। তাঁদের মাঝে কোথাও কোনো আড়াল নেই। সম্পূর্ণ সততার উপর প্রতিষ্ঠিত এ সম্পর্কের পরিণতিই বা কী? এও কি তাহলে শুধু ফিউরির অভিশাপ?
প্রফেসর কি স্বীকার করবেন? তিনি নিজেই কি বুঝতে পারছেন কী ঘটছে, কেনো ঘটছে? যেদিন মিলা তাঁর ঘাড়ের ওপর ঠোঁট রেখে সমস্ত বেদনা, জীবনব্যপী তাড়া করা অভিশাপ, কষ্টের উচ্চারণ শুষে নিচ্ছিলো, তখন তাঁর মনে হচ্ছিলো যেনো এই মেয়েই সেই ফিউরি, যে নিতান্ত প্রতিহিংসাবশত তাঁর অস্থির ভাবে ফুটন্ত রক্ত পান করছে। অথচ কী অদ্ভুত, ঠিক তখনই তিনি তাঁর অভ্যস্ত সেই পুরনো খেলার নিয়মটা মনে করতে পারলেন। ‘আপনার ভেতর এতোদিন ধরে যে জিনিসটা অপেক্ষা করছে, মুক্তির আশায় প্রহর গুনছে, যার চাপে আপনি নিজেও এতোটাই জর্জরিত, তাকে আজই কাজে লাগান। আপনি লিটল ব্রেইনের জন্মদাতা, আপনি এটা পারবেন। হ্যাঁ, এভাবেই আপনি নির্ভার হোন।’
সেদিন থেকে প্রফেসর অনুভব করতে শুরু করেছেন অন্য এক উন্মাদনা। তাঁর ভেতরে সেদিনই গড়ে উঠেছে অন্য এক পৃথিবী, অন্য এক কল্পনার মোহাচ্ছন্ন মায়াজাল। মিলার কাছে তিনি কৃতজ্ঞ, কারণ এই অপার্থিব কন্যাটি তাকেও এক অপার্থিব আনন্দের শিক্ষা দিয়েছে। তাঁকে দিয়েছে বর্ণনার অতীত নতুন এক সম্পর্কের স্বাদ, নতুন রকম শ্বাসকষ্টের অভিজ্ঞতা, নতুন প্রকরণের সিজোফ্রেনিয়ার দুর্ভোগ। পৃথিবীতে তো কতো নাম না জানা সম্পর্কই গড়ে ওঠে, কতো অদ্ভুত অবস্থানে মানুষ নিজেকে মানিয়ে নেয়। কিন্তু নিজের মনে সততা থাকলে কোনো সম্পর্কই পাপ নয়। সেই সম্পর্কের কোনো নাম নাইবা দেয়া গেলো.....
[সালমান রুশদী ১৯৪৭ সালের ১৯ জুন ভারতের মুম্বাই (বোম্বে) নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোরে তিনি সপরিবারে ইংল্যান্ডে স্থানান্তরিত হন এবং রাগবি স্কুল ও কিংস কলেজে শিক্ষা জীবন কাটান। বর্তমানে তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। এছাড়াও তিনি বর্তমানে ‘রয়াল সোসাইটি অব লিটারেচার’ এর ফেলো এবং ‘পেন আমেরিকা’ সেন্টারের সভাপতি ও ‘কমান্ডার ডি আর্ট অ্যান্ড ডি লেটার’ এর সদস্য।
সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর প্রথম সৃষ্টি ‘Grimus’. ১৯৯৩ সালে ‘Midnight’s Children’ এর জন্য তিনি বুকার পুরস্কার পান। ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জীবনের তুলনা, রূপকথা, ইতিহাস, রাজনীতি, মনস্তত্ত্ব, সমকাল সব মিলিয়ে তাঁর উপন্যাস এক জাদু-বাস্তবতার অনুভূতি দান করে।
‘Fury’ উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে ‘ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স’কে অবলম্বন করে। একদিকে কন্যা সন্তানের জন্য স্নেহের টান, অন্যদিকে মানুষ হিসেবে শুধু নারী আর পুরুষ হিসেবে জীবনের অর্থ খোঁজা, এই রকম মানসিক টানা-পোড়েনের চিত্রই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। -অনুবাদক]
সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর প্রথম সৃষ্টি ‘Grimus’. ১৯৯৩ সালে ‘Midnight’s Children’ এর জন্য তিনি বুকার পুরস্কার পান। ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জীবনের তুলনা, রূপকথা, ইতিহাস, রাজনীতি, মনস্তত্ত্ব, সমকাল সব মিলিয়ে তাঁর উপন্যাস এক জাদু-বাস্তবতার অনুভূতি দান করে।
‘Fury’ উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে ‘ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স’কে অবলম্বন করে। একদিকে কন্যা সন্তানের জন্য স্নেহের টান, অন্যদিকে মানুষ হিসেবে শুধু নারী আর পুরুষ হিসেবে জীবনের অর্থ খোঁজা, এই রকম মানসিক টানা-পোড়েনের চিত্রই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। -অনুবাদক]
>> পথিক ১৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন