মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

গল্প >> দৃশ্যপট : মুজাফফর আলী তালুকদার

দৃশ্যপট

মুজাফফর আলী তালুকদার


- ঠুক্ ঠুক্ ঠুক্ -
দরোজায় টোকা দেওয়ার শব্দ
- কে?
- দুয়ার খুলেন মাদবর সাব। আমি গনি।
কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকার রাত। বাইরে বৃষ্টি ঝরছে টুপ টুপ করে। গা ছমছমে পরিবেশ। প্রায় শব্দহীনভাবে দরজা খুলে গেলো। ভিজে কাপড়ে ঘরে ঢুকলো গনি আর ছাত্তার। ওদের দিকে তাকিয়ে বাহাজ মাদবর বিস্ময়ে বলে উঠলো - কী খবর গনি?
- রাইত কয়ডা সাব?
হারিকেন উঁচু করে টেবিল ঘড়িটার দিকে চেয়ে বাহাজ মাদবর বললো - বারোটা। তা হোক, আগে খবর ’!
- কেল্লা ফতে, মাদবর সাব!
- ফতে?
- , এহেবারে সাবাড়।
- লাশ কোথায়?
- নোজঙ্গের মোড়ে, পাচমুড়া বিলের পানার নিচে। একটু নড়ে উঠে গনি। গামছা দিয়ে ভিজে মাথা মুছতে মুছতে বলে - নেইন, টেহা দেইন। সেকেন্ড শো ভাঙবো এহন। হইটালে নাম ডাইরি করছি। ছোৎ কইরা যামু গা। কাপড় বদলান নাগবো।
মাদবরের কাছে এসে দাঁড়ায় ছাত্তার। ফিসফিস করে বলে - বিশ্বাস অয় না মাদবর চাচা? গনি তো কিছুই করে নাই। আমিই তো বেবাক করছি। মাথার মধ্যে নোয়ার ডাং দিয়া এছা বাড়ি দিছিলাম-এক্কো বাড়িতেই খলিল চেরমেন পইড়া গেলো।
বাহাজ মাদবর ছাত্তারের মুখটা চেপে ধরে - আরে-- কথা কইছ না, হালার পো হালা। কেউ হুনবো।
হারিকেন উঁচু করে পকেট থেকে আলমারির চাবিটা বের করে আনে বাহাজ মাদবর। তারপর তালা খুলে দুজনের সামনে দুটাকা ধরতেই মাথা নেড়ে উঠে গনি - না মাদবর সাব, বেবাক টেহা একবারেই দিয়া দেইন। বাহি থুমু না এহন।
রেগে উঠে বাহাজ মাদবর - কী কইলি?
- কইছি মাদবর সাব। ঠিকই কইছি।
- এতো রাতে কেউ ঘর থিকা টেহা দেয় রে চুতমারানির পো!
প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে ছাত্তার - গাইল পারবাইন না মাদবর চাচা। কাম কইরা টেহা চাইছি। তাড়াতাড়ি করেন। সোময় নাই।
মুহূর্তে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে বাহাজ মাদবর - যাবি গা - যা - যা এহন। পরে আবি।
ঘুরে দাঁড়ায় ছাত্তার - মাদবর চাচা, কামডা বালা অবো না কইলাম। কাম শেষ অইলেই বাহি বেবাক টেহা একবারেই দিবার চাইছুন। এহন আবার বামছাম করুন ক্যা?

টর্চ লাইটের তীব্র আলো মাদবরের মুখের উপর ফেলে হঠাৎ ঘরটা উদ্ভাসিত করে দেয় ছাত্তার।
বাহাজ মাদবরের উত্তেজিত দেহটা কেঁপে উঠে - ছত্তাইরা! বাড়াবড়ি করিস না।
- তাড়াতাড়ি বিদায় করেন চাচা।
- চুপ। যা - বাইর হইয়া যা।
- টেহা ছাড়াই?

দ্বিতীয়বার ছাত্তারের হাতের টর্চ জ্বলে উঠতেই থাবড়া দিয়ে তা ধরে ফেলে বাহাজ মাদবর - শুয়োরের বাচ্চা আমার মুখের উপর কথা।
ছাত্তারের মুখে ঘুষি লাগিয়ে দেয় বাহাজ মাদবর।
দৃশ্য দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলো না গনি। মাথায় রক্তে উঠে গেলো। হাতটা চলে গেলো তার কোছের কাছে। শক্ত একটা প্রতিশোধাকাক্সক্ষা উন্মাদ করে দিলো তাকে। সঙ্গে সঙ্গে কোছে গোঁজা ছোড়াটা বসিয়ে দেয় বাহাজ মাদবরের বুকে - শালা হারামির পয়দা।
চোখের নিমেষেই ঢলে পড়লো বাহাজ মাদবরের বেঁটে দেহটা।
একটা গোঙানি। ধপাস শব্দ।

আবারও জ্বলে উঠলো ছাত্তারের টর্চ।

আরেকটি শব্দ, আলমারি খোলার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন