শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

গল্প >> আঙুরলতা এখনও নন্দকে ভালোবাসে : জায়েদ হোসাইন লাকী

আঙ্গুরলতা এখনও নন্দকে ভালোবাসে

জায়েদ হোসাইন লাকী

১.
ফ্ল্যাটবন্দি জীবন। নিয়ম মেনে সীমারেখায় চলতে হয়। মধ্যম গোছের চাকরি করে রাতুল। অফিস সময়ে দারুণ ব্যস্ততা। ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনাটা সব সময়ের সঙ্গী। যান্ত্রিক জীবনে যাপিত যন্ত্রণা। বেতনের সাথে হিসাব কষে চলতে হয় তার নিত্যদিন। ভালোবেসে বিয়ে করেছে মৌমিতাকে।
অফিস শেষে স্ত্রীর ‘মিসকল’ প্রতীক্ষায় থাকে রাতুল প্রতিদিন। প্রতিদিনের মতো আজও মিসকল আসে মৌমিতার মোবাইল থেকে। ফোনটা ঘোরায় রাতুল। অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে মৌমিতার উচ্ছল হাসি। সারাদিনের ব্যস্ততার শেষে ক্লেদার্ত সময়ে স্ত্রীর এই হাসিটুকু প্রণোদিত করে রাতুলের জীবন।

২.
নতুন ঘর বেঁধেছে রাতুল আর মৌমিতা। সংসারে চাল-ডাল নুন তেলের নিত্য অভাব না থাকলেও দুজনের সম্পর্কের মাঝে ইদানিং কীসের যেনো এক শূন্যতা। কীসের যেনো অভাব। তাহলে কি ভালোবাসা এতো অল্পতেই মরে গেলো? রাতুল ভাবে।

৩.
অফিস শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরে রাতুল। মৌমিতা লেবু দিয়ে শরবত করে দেয়। রাতুল এক নিমেষে সবটুকু শরবত পাচার করে দেয় পেটের মধ্যে।
- আরেক গ্লাস শরবত করে দিই। মৌমিতা বলে।
- না, দরকার নেই।
- তা হলে চা বানিয়ে আনি?
- চায়ের সাথে চানাচুর থাকলে দিও। রাতুল হাসতে হাসতে বলে। এই একটি অভ্যাস বড় অদ্ভুত রাতুলের, চায়ের সাথে চানাচুর না হলে তার চলে না।
মৌমিতা চা নিয়ে বারান্দায় আসে। রাতুল মৌমিতার হাত টেনে ধরে পাশে বসায়। 
মৌমিতার মুখটি আজ কেমন মলিন। রাতুল মৌমিতার মুখটিকে দু’ হাত দিয়ে ধরে অপলক তাকিয়ে থাকে কয়েক মিনিট। মৌমিতা হাসে। রাতুলের সাথে খুনসুটি করে। রাতুলের মাথাটি নিজের কাছে টেনে এনে চুমো দেয়। রাতুলও চুমোয় চুমোয় ভরে দেয় মৌমিতার মুখ।
পাশের ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে রফিক সাহেবের স্ত্রী বিষয়টি দেখতে পেয়ে হেসে ওঠেন, কী খবর ভাই সাহেব। আমি কিন্তু দেখে ফেলেছি!
রাতুল লজ্জা পেয়ে হাসে।
রফিক সাহেবের স্ত্রী পুনরায় ফিক ফিক করে হেসে ওঠেন, চালিয়ে যান ভাই। লজ্জা পাচ্ছেন কেনো? এখনই তো ওসবের সময়। 
মৌমিতা লজ্জায় দৌড়ে পালায়।

৪.
পারষ্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখন ফেইসবুক অনেকেরই নির্ভরতার উপায় হয়ে উঠছে। আবার এ ফেইসবুকই কারো কারো জন্য বিরাট সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বামীদের ফেইসবুকে অ্যাকাউন্ট থাকলে স্ত্রীরা সন্দেহ করে আবার স্ত্রীরা ফেইসবুকে বসলে স্বামীদের মাথায় বজ্রপাত হয়। এই রোগে রাতুল আর মৌমিতা দুজনেই আক্রান্ত। রাতুলের অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ থাকে সব সময়। প্রযুক্তির খাতিরে নেটনির্ভর অনেক কাজ করতে হয় তাকে। ফাঁকে ফাঁকে ফেইসবুকে আড্ডাও দেয় বন্ধুদের সাথে। ফেইসবুকে রাতুলের বন্ধুর সংখ্যা বাড়তে থাকে দ্রুতগতিতে। মৌমিতাও ফেইসবুকে বসে। তবে তা বেশি সময়ের জন্য নয়। মৌমিতা রাতুলকে নিষেধ করে দিয়েছে ফেইসবুকে বসতে। তার ভাষ্যমতে, পরকীয়ার একটি প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ফেইসবুক। রাতুল কোনো উত্তর দেয় না মৌমিতার এই অভিযোগে।  
৫.
নীলক্ষেত বাকু শাহ মার্কেটে মোবাইলে টাকা লোড করতে গিয়ে দীপিতার সাথে পরিচয় হয় রাতুলের। পরিচয়টা আসে অন্য একটি সূত্র ধরে। ওখানে সৌরভের সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় রাতুলের। সৌরভ রাতুলের পুরনো বন্ধু। অনেকদিন যোগাযোগ ছিলো না দুজনের। এক সাথেই দুজনে বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলো। সৌরভ এখন খুলনায় সহকারী জজ। দীপিতা তার সাথে ছিলো। তার বড় বোনের মেয়ে। দুজনকে পরিচয় করিয়ে দেয় সৌরভই। দীপিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করছে। রাতুলের সাথে সৌরভ ও দীপিতার কথা হয় দীর্ঘক্ষণ। তিনজনে একসাথে চা খায়। গল্প করে। রাতুল তার বিজনেস কার্ডটি দীপিতাকে দেয়। আরেকটি সৌরভকে দিয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিউ মার্কেটের দিকে পা বাড়ায় রাতুল।

৬.
একদিন দীপিতা নামের একটি মেয়ের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে রাতুলের ফেইসবুকে। রাতুল ছবি দেখে চিনে ফেলে দীপিতা নামের এই বন্ধুটিকে। অ্যাড করে তার বন্ধু তালিকায়। ক্রমে জমে ওঠে বন্ধুত্ব। দুজন দজনকে মেইল পাঠায়, চ্যাট করে প্রতিনিয়তই। একজন আরেকজনের ওয়ালে ফুল-ছবি ট্যাগ করে। দুজনের বন্ধুত্ব এক পর্যায়ে গভীর হয়। অন্য দিকে মোড় নেয়।

৭.
মৌমিতা একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে। কাস্টমারের নানা ধরনের সমস্যা সমাধান করতে হয় তাকে। ঘরে একা একা থাকতে তার ভালো না লাগায় এই চাকরিটা নেওয়া। নয়টা-ছয়টা অফিস। প্রথম প্রথম কাজের চাপ তেমন নেই। সহকর্মীরা তাকে দারুণ ভালো জানে। কাজে উৎসাহ দেয়। শিখিয়ে দেয়। কর্মক্ষেত্রে সাজিদ নামের এক সহকর্মীর সাথে মৌমিতার দারুণ সখ্যতা গড়ে ওঠে। সাজিদ মৌমিতাকে সবসময় আগলে আগলে রাখে। দুজনের বন্ধুত্ব পিরামিডের মতো গাঢ় হতে থাকে। 

৮.
রাতুল আর মৌমিতার দিন খুব ভালোই যাচ্ছে হালে। দুজনে একসাথে বাসা থেকে বের হয়। এক রিকশাতে কাঁটাবন মোড়ে আসে। রাতুল রিকশা থেকে নেমে চলে যায় বামে ধানম-ি, আর মৌমিতা পল্টনের মোড়ে। শুধু দুজন রিকশা বদল করে কাঁটাবনের ঢালে এসে।

৯.
রাতুল বেশ ক্লান্ত আজ। অফিসে কাজের চাপে তার জীবন চিঁড়েচ্যাপটা প্রায়। মৌমিতা কয়েকবার ফোন দিলেও কথা বলার ফুরসত মেলেনি রাতুলের। সারাটিদিন বসে বসের সাথে কোম্পানির প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করেছে সে। মৌমিতা এতোক্ষণে নিশ্চয়ই মন খারাপ করে বসে আছে। চায়ের অবসরে রাতুল ফোন ব্যাক করে মৌমিতাকে। ব্যস্ত পায় মৌমিতার ফোন। মিনিট দশেক পর আবার ফোন দেয় রাতুল। এবারও ওপ্রান্তে ব্যস্ততা। ক’দিন ধরেই খেয়াল করছে রাতুল, মৌমিতার ফোনটি প্রায়ই ব্যস্ত থাকে। 
কয়েকবারের চেষ্টায় ফোনের লাইন পায় রাতুল।
- যখনই ফোন করি, তুমি বিজি বিজি... বিজি...! ক্যানো? রাতুল লাইন পেয়ে মৌমিতাকে ধমক দেয়।
- এক বান্ধবী ফোন করেছিলো। মৌমিতার উত্তর।
- বান্ধবীর সাথে এতোক্ষণ কথা বলছিলে! রাতুলের কণ্ঠে ঝাঁজ।
দুজনের মধ্যে বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

১০.
মনটা খারাপ হওয়ায় একটু আগেই অফিস থেকে বের হয় রাতুল। শ্রান্তমনে হাঁটছে আজিজ মার্কেটের সামনে দিয়ে। পথে রেস্তোরাঁয় থামে, চা খাওয়ার জন্যে। ভেতরে ঢুকে হাতের ডান দিকের প্রথম টেবিলটিতে বসে রাতুল। সারা দিনের ব্যস্ততায় ক্লান্ত মন বেশ প্রশান্ত হয়। রাতুল চায়ে চুমুক দেয়। আজ অনেকক্ষণ বসবে এখানে মনে মনে ভাবে। রেস্তোরাঁটি সবসময়ই পরিপূর্ণ থাকে নানা গোছের মানুষে। সামনের টেবিলটিতে বসে মধ্যবয়সী দু’জন লোক রাজনৈতিক আলাপ করছে বেশ জোরে শোরে। রাতুল কান পাতে তাদের আলোচনায়। চেনা কণ্ঠে মোহ ভাঙে তার। কৌতুহলে চোখ ফেরায় রাতুল। বাম দিকের পেছনের টেবিলটিতে চোখ পড়তেই রাতুলের মাথায় বজ্রপাত হয়। আকাশটা যেনো আছড়ে পরে তার মাথায়। টেবিলটিতে রাতুলের দিকে পিঠ দিয়ে বসে আছে মৌমিতা। সাথে একজন সুদর্শন পুরুষ।
রাতুলের বুকে যেনো হাতুড়ি পেটাচ্ছে। চোরের মতো এক রকম পালিয়ে বেরিয়ে আসে সে রেস্তোরাঁ থেকে। রাস্তায় এসে প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকায়। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে তাতে আগুন জ্বালায় রাতুল। সিগারেটের ধোঁয়াটা তার মস্তিষ্ক এফোড়-ওফোড় করে দিচ্ছে এখন। বিশ্বাস করতে পারছে না কিছুক্ষণ আগে দেখা দৃশ্যটা। সন্দেহ হয়, ভুল দেখেনি তো! ভুলই হয়তো।

১১.
রাতুলের সাথে হঠাৎ চারুকলায় দেখা হয়ে যায় দীপিতার। ইতিমধ্যে দুজনের বন্ধুত্বের সম্পর্কের রঙটা অনেকটা গাঢ় হয়েছে। দুজনের মধ্যে বয়সের ব্যবধান বেশ। তবে বয়স তো আর সবকিছুকে সামাল দিতে পারে না। দীপিতা রাতুলকে নিয়ে বকুলতলায় বসে। দুজনে গল্প করে অনেক সময় ধরে। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ওরা বাদাম চিবোয়। হালকা রসিকতায় তারা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যায়। কখন যে সন্ধ্যা নেমেছে তা টেরই পায়নি এতোক্ষণ। সম্বোধন কখন যে আপনি থেকে তুমিতে এসে ঠেকেছে টের পায়নি তাও। 

১২.
রাতুলের সাথে ফেইসবুকে, ফোনে, সরাসরি, সাক্ষাতে দীপিতার সম্পর্ক চলতে থাকে। অন্যদিকে মৌমিতা এখন ডুবে আছে সাজিদ নামের তার সহকর্মীর প্রেমের বেনোজলে।

শেষ কিস্তি
রাতুল আর মৌমিতার সম্পর্কে এখন কোথায় যেনো ঢিল পড়েছে। দুজনে একসাথে জীবন যাপন করলেও অশান্তির ঝড় বয়ে চলেছে তাদের জীবনে। যে রাতুল কখনও মৌমিতাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলতো না। সে রাতুলই মৌমিতার গায়ে হাত তোলে। মৌমিতাও কম যায় না। কথায় কথায় ঝগড়া বাঁধে দু’জনের। প্রায় প্রতিরাতেই ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে তাদের স্বর উঁচুতে ওঠে। আগে দুজনে খুনসুটি হতো, দুষ্টুমি হতো, ভালোবাসাও হতো। এখন ভালোবাসা ফিকে হয়ে হয়ে তাদের জীবনে নেমে এসেছে কষ্টের কুয়াশা। ইবলিশ যেন ভর করেছে ওদের ঘাড়ের ওপর। দুজনে দুজনকে দুষতে থাকে, দায়ী করে। একদিকে মৌমিতা অন্যদিকে দীপিতা। একদিকে রাতুল আর অন্যদিকে সাজিদ। রাতুল আর মৌমিতা দুজনেই দুজন থেকে আজ যোজন যোজন পথ দূরে। অথচ জীবন নামের এই দীর্ঘ পথটি তারা দুজন একে অপরের হাতে হাত রেখে পাড়ি দেবে বলে একদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলো।

এক রাতে প্রচ- ঝগড়া হয় দুজনের। পাশের ফ্ল্যাটের রফিক সাহেবের স্ত্রী বিষয়টি শোনেন মৌমিতাদের কাজের মেয়ের কাছ থেকে। সকালে ফোন দেন মৌমিতাকে। মৌমিতা জানায়, রাতুলের সাথে তার আর সংসার টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। রাতুলের সাথে থাকতে নাকি তার এখন ঘেন্না লাগে। তাছাড়া রাতুলও নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলাদা পথ বেছে নেওয়ার।
জানালা দিয়ে ভোরের হিমেল বাতাস রাতুলের বারান্দার পর্দাগুলোকে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। ওদের সংসারেও কাঁপন তোলে ভাঙনের ঝড়। মৌমিতা তৈরি হয় অফিসে যাওয়ার জন্য। আজ রাতুলের ডে-অফ। রাতুল দিনটি কীভাবে পার করবে ভাবছে সোফায় বসে। দুজনের কেউই কারো সাথে কথা বলে না আজ। দরজার নিচ দিয়ে হকার খবরের কাগজ ঘরের ভেতরে ছুঁড়ে দিয়ে গেছে। রাতুল খবরের কাগজটি দু’ হাতে তুলে নেয়। আয়েশ করে বসে সোফার ফোমের ওপরে।
মৌমিতা অফিসে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। রাতুল খবরের কাগজের প্রথম পাতায় চোখ তুলে তাকিয়ে চমকে ওঠে - শিরোনাম দেখে। ‘আমেরিকাতে প্রতি পাঁচজন ডিভোর্সি দম্পতির একজনের ডিভোর্স হয় ফেইসবুকের কারণে।
রাতুল এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলে বাকি অংশটুকু। মৌমিতা তখন দরজা পার হয়ে সদর গেটের কাছে পৌঁছে গেছে। এমনিতেই মৌমিতার লেট হয়ে গেছে। চাকরিটা বোধহয় আর থাকবে না। মনটা তো খারাপ হয়ে আছে গত রাত থেকেই।
রাতুল দৌড়ে যায় গেটের কাছে। চেঁচিয়ে ডাক দেয় মৌমিতাকে। মৌমিতা অবাক হয়। তাহলে গত রাতের সব ঝগড়াঝাঁটি কি রাতুল ভুলে গেলো নাকি। তারা তো দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সংসার ছিন্ন করার। 
রাতুল দৌড়াতে থাকে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে।
- মৌ, দেখে যাও কী খবর ছেপেছে পত্রিকাতে। রাতুল বলে।
মৌমিতা খুব ধীরে কাগজটি হাতে তুলে নেয়। রাতুল ফেইসবুক বিষয়ক লেখাটি মৌমিতাকে পড়তে বলে।
মৌমিতা এক নিঃশ্বাসে দম বন্ধ করে পড়ে নেয় খবরটা। রাতুলের দিকে চোখ তুলে তাকায়। রাতুলের চোখ দুটি উচ্ছ্বাসে চকচক করে ওঠে।
- এই ফেইসবুকের কারণেই আমাদের সংসারেও আগুন লাগতে বসেছিলো। না...? রাতুল মৌমিতাকে প্রশ্ন করে।
মৌমিতা খুশিতে আত্মহারা হয়। যন্ত্রণাগুলো তার এখন ভেঙে খানখান হয়। মনটা আনন্দে নেচে উঠতে চায়।
রাতুল দু’ হাতে জাপটে ধরে মৌমিতাকে। মৌমিতাও রাতুলকে আঙ্গুরলতার মতো করে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে থাকে। দুজনেই কাঁদে। দুজনে ভুলে যায় গত রাতের ঝগড়াঝাঁটির কথা। ভুলে যায় পেছনের বৈরিতার কথা। 
মৌমিতার আর অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই। চাকরিটা ছেড়েই দেবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে।
- তুমি আমার লক্ষ্মী বউ হয়ে থেকো। রাতুল বলে।
- তাহলে, তুমি আমার নন্দ...! হা হা  হা...।
- আর, তুমি আমার আঙ্গুরলতা। তাই না? রাতুল বলে আর হাসে।
মৌমিতা আর রাতুলের হাসিতে ফুটে ওঠে ভোরের আকাশের মতো পবিত্র আর স্নিগ্ধ এক স্বর্গীয় আভা। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে থাকে দীর্ঘক্ষণ। 

মোবাইল ফোনটি বাজছে সেই কখন থেকে। স্ক্রিনে ভেসে উঠে রফিক সাহেবের স্ত্রীর নাম। মৌমিতা ফোন তুলে।
- আমি কিন্তু জানলা দিয়ে সব দেখছি, মিতা ভাবী। রফিক সাহেবের স্ত্রীর কণ্ঠে হাসির ঝলক।

বাতাসে জানালার পর্দা উড়তে থাকে।

নোট : ফেইসবুকের কারণে অনেকের ঘর ভাঙতে পারে। আবার অনেকের নতুন জীবনের সূচনাও হতে পারে। তবে প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান বিপরীত ক্রিয়া আছে।

1 টি মন্তব্য: