ঘুণ পোকা
সুকুমার রুজ
আচমকা স্বপ্নটা ভেঙে গেলো বিলাসের। বিদঘুটে স্বপ্ন। আজগুবি। মনের মাঝে স্বপ্নে দেখা বিটকেল লোকটা। অদ্ভুত চেহারা। গায়ের রঙ ফ্যাকাশে সাদা। মাথায় ছোট-ছোট লালচে চুল। চোখদুটো নীল। মুখে গোঁফ-দাড়ির চিহ্ন নেই। তার আজগুবি কথাগুলো মনে পড়ছে বিলাসের। নাকি সুরে কাটা কাটা কথা - আজ থেকে যার দিকে তোমার দৃষ্টি পড়বে, তখখুনি তার মনের ভাবনাটা তোমার মনেও চলে আসবে। বিলাসের হাসি পায়। অন্যের ভাবনা সে জেনে যাবে! সত্যিই স্বপ্নের কোনো মাথামু-ু থাকে না। স্বপ্ন কখনও সত্যিও হয় না। বিলাসের কানে কাক ও অন্যান্য পাখ-পাখালির ডাক। জানলা দিয়ে আবছা আলো ঘরের মধ্যে। ওর এখন বিছানা ছাড়ার ইচ্ছে নেই। হাই তুলে পাশ ফেরে সে। পাশেই বিনতা ঘুমের জগতে। নীলচে আলোয় বিনতার আলগা শরীর দেখতে ভালো লাগে তার। ঘুমন্ত মুখটা যেনো কিশোরীর! কিন্তু এ কী! এ কী হচ্ছে তার মনে! বিনতার স্বপ্ন তার মনে চলে আসছে! আশ্চর্য! বিনতা স্বপ্নে দেখছে গোরাকে। বাড়িওয়ালার ছেলে গোরা। বিনতা ওকে বলছে - গোরাদা! তুমি আর আসো না তো! আগে মাঝে মাঝে আমার ঘরে চলে আসতে। এখন আমাকে তোমার ভাল্লাগে না? ও তো দুপুরে স্কুলে থাকে। আজ দুপুরে চলে এসো না। কতদিন তোমার সাথে গল্প করিনি। জানো তো আমি কতো একা। বিলাস হতভম্ব। বিনতার স্বপ্ন, তার অবৈধ কামনা সত্যি-সত্যিই ওর মনে ধরা পড়েছে। বিলাসের গা ঘিন ঘিন করে ওঠে। ছিঃ! বিনতা এমন! অথচ ও বিনতার সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছে। কিন্তু ওকে দেখে তো কিছু বোঝা যায় না! না না বিনতা এমন হতে পারে না। এ তারই মনের নোংরামি! অবাস্তব কল্পনা। কিন্তু সে স্পষ্ট শুনলো যেনো ‘গোরাদা! ...!’ বিলাসের মন অস্থির। সে নিশ্চিত হতে বিছানা ছাড়ে। বারান্দায় বেরোতেই বাড়িওয়ালা গুহবাবুর মুখোমুখি। বাড়িওয়ালার হাতে ধরা ডোবারম্যানের ‘চেন’। মুখে মেকি হাসি। চোখেমুখে অবাক হবার ছাপ ফুটিয়ে প্রশ্ন - কী ব্যাপার বিলাসবাবু! আজ বড় সকাল-সকাল! মর্নিংওয়াক শুরু করছেন নাকি আজ থেকে?
বিলাস হালকা হাসি ফুটিয়ে এমনভাবে ঘাড় নাড়ে যার অর্থ হ্যাঁ বা না দুটোই হতে পারে। গুহবাবুর মুখে হাসি থাকলেও মনে অন্য ভাবনা। বিলাসের মনের পর্দায় অদ্ভুতভাবে সে ভাব ফুটে ওঠে - ব্যাটা মাস্টার! এ মাসেই তোর এগ্রিমেন্ট শেষ। এবার এমন পেছনে লাগবো, পালাতে পথ পাবি না। তারপর আবার নতুন ভাড়াটে। আবার অ্যাডভান্স! আরও ফিক্সড ডিপোজিট। কী আনন্দ!
উঃ! কী পাষ- লোকটা! ব্যবহারে বুঝার উপায় নেই মনে এত প্যাঁচ! যদি সত্যিই বুড়ো বদমাইসি করে তাহলে আবার বাড়ি খোঁজা। আবার নতুন করে সংসার পাতা...! স্কুল-ট্যুইশনির ফাঁকে-ফাঁকে বিদেশী কোম্পানির নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের ‘চেন’টা এই এলাকাতেই করেছে। এই এলাকায় ঘর ভাড়া না পেলে...? নাঃ! স্বপ্নটা তাহলে সত্যি সত্যি ফলছে তো! এতে অবশ্য একটা সুবিধা হলো, আগেভাগে অন্যের মনের ভাবনাটা সে জানতে পারছে। প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা সে আগেই নিতে পারবে। তার নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ে এ ব্যাপারটা দারুণ কাজে লাগবে। অন্যের সাইকোলজি...। বিলাসের মনে হালকা খুশি। কিন্তু বিনতার স্বপ্নের কথাটা মনে পড়তেই আবার মন ভারি হয়। এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। গোরাটা একটা লম্পট। বিনতা কী করে ওর চক্করে পড়লো কে জানে!
সূর্য উঠতে এখনো দেরি আছে। বিলাসের ট্যুইশনে বেরোনোর সময়ও হয়নি এখনো। কিন্তু বিছানায় গিয়ে শুতেও আর ইচ্ছে হচ্ছে না। বিনতার উপর একটা চাপা রাগ ও ঘৃণা ওর মনে। মনটাও ভালো নেই। অন্যের ভাবনা ওর মনে ঢুকে মনটা চঞ্চল হচ্ছে। রাস্তার দিকে চোখ যায় বিলাসের। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের পাশে ছোট ময়লা ফেলা আস্তাকুঁড়ে কাকগুলো ভিড় জমিয়েছে। অনেক কাক একসঙ্গে খাবার খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। ওদের পাশে-পাশে দু-একটা শালিকও বেশ ভীরু-ভীরু চোখে। রাস্তার ধারে সরু কাঁটামাদার গাছটার মাথায় লাল-লাল ফুল। গাছটাতে পাতা নেই বললেই চলে। সেই ফুলের খোসার উপর একটা দোয়েল বসে ফুল থেকে কী খুঁটে খাচ্ছে কে জানে। সরু গাছটা হাওয়ায় দুলছে। তার সঙ্গে সঙ্গে দোয়েলটাও। বিলাসের চোখে এসব দৃশ্য নতুন লাগছে। এ দৃশ্য দেখার ফুরসত হয় না তার কোনো দিনই। ইচ্ছেও লাগে না। আজ যেনো একটু অন্য রকম। বিলাস চপ্পলে পা গলিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। আজ যখন ভোরে জেগেই গেছে, ভোরটাকে সে উপভোগ করতে চায়। কিছুটা এগোতেই কাকলির মায়ের সাথে চোখাচোখি। কয়েকটা বাড়ি পরেই ওরা থাকে। বিলাসকে দেখে নিস্পৃহ গলায় বলে - কী গো মাস্টার! এত সকালে পড়াতে যাচ্ছো, তোমার ছাত্তরের ঘুম ভেঙেচে এখন? বিলাস হালকা হেসে বলে - না মাসিমা! এখন পড়াতে যাচ্ছি না। এই একটু পায়চারি আর কী! কাকলির মা খোকনদের প্রাচীরের ধারে টগর গাছ থেকে ডিঙি মেরে ফুল তুলতে তুলতে বলে - তা বেশ। ভালো, ভালো। এই মুহূর্তে কাকলির মায়ের মনের ভাবনা বিলাসের মনে - হাড়হাভাতে মাস্টার কোত্থেকে এসে এ পাড়ায় জুটে আমার ‘সব্বোনাশ’ করলো। মুকে যেনো মদু - মাসিমা - আমার চোদ্দপাকের বোনপোরে! এখানে পাড়ার সব ‘টিউশানি’গুলো তুই ধরে নিলি। ওগুলো তো সব কাকলির বাবারই ছিলো। বুড়ো মানুষটা চোকে কম দেকে। ও কি অন্য পাড়ায় পড়াতে যেতে পারে! যাওবা কাকলির বিয়েটা যেমন-তেমন করে দেওয়ার কথা ভাবছিলাম...! বিলাস এ কথাটা একবারও ভাবেনি। পেনশন না-পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকের মনোকষ্টের কারণ হয়েছে সে! কিন্তু তার কী করার আছে। ছাত্র-ছাত্রীর বাবা-মা তাকে পড়াতে বললে সে তো পড়াবেই। সে তো টাকা উপার্জন করতেই শহরে এসেছে। এখনই তার খাটার বয়স। যত বেশি রোজগার করে নিতে পারে। তা না হলে পরে তো কাকলির বাবার দশা তারও হবে! তাই কাকলির মায়ের ভাবনাটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে। তবুও মনটা কেমন যেনো খিঁচখিঁচ করছে তার। ওই অদ্ভুত স্বপ্নটাই যত নষ্টের গোঁড়া। স্বপ্নটা হঠাৎ সে দেখলোইবা কেনো? আর দেখলোই যদি তা সত্যি সত্যি ফলছেই কেনো? এর আগে কত স্বপ্নই সে দেখেছে - পিএইচডি করে কলেজে লেকচারার হয়েছে কিংবা অমিতাভের মুখোমুখি বসে সব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিয়ে ক্রোড়পতি বনেছে। এ স্বপ্নগুলো তো ফলেনি। স্বপ্নে দেখা সেই বিদঘুটে লোকটাইবা কে? মুখটা অনেকটা জর্জ বুশের মতো লাগছিলো। নাকি তার নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের অর্গানাইজার, সে কাল সেমিনারে বুঝাচ্ছিলো কীভাবে মানুষের মনের মধ্যে কিংবা আস্তে আস্তে একদম অন্দরমহলে ঢুকে পড়তে হয়; সেই মানুষটার মুখ ছিলো ওটা? কাল কী সুন্দর অংক কষে বুঝিয়েছিলো ম্যানুফ্যাকচারার টু কাস্টমার। মাঝে ডিলার, সাব ডিলার, রিটেলার, এমনকি বিজ্ঞাপন - সব ওমিট। সেই অংশটা পুরো কমিশন। পার মান্থ অ্যাবাউট টেন থাউজেন্ড। ইয়ারলি ওয়ান ল্যাক টোয়েন্টি প্লাস ইনসেনটিভ। দু’ বছরে বাড়ি-গাড়ি। গুহবাবুদের দলে তারও নাম। ইস হ্যাভিক স্বপ্ন দেখিয়েছে মাইরি! ওটা যদি সত্যি হয় তা হলে তো কেল্লা ফতে! এসব ভাবতে ভাবতে বিলাস কখন পায়ে পায়ে পৌঁছে গেছে পাড়ার পার্কে।
বিলাস বিনতার শরীর থেকে চোখ সরিয়ে নিলেও তার স্বপ্ন কিন্তু ভাঙেনি। স্বপ্নে গোরাদা তাকে কথা দিয়েছে আজ দুপুরে আসবে। বিনতার মনে খুশির হাওয়া। আজ সে গোরাদা’র সঙ্গে দুপুরে গল্প করতে পারবে। ওর মুখ থেকে তার রূপের ভুরি ভুরি প্রশংসা শুনবে। দু’জনে মন খুলে কত কথা, হয়তোবা আরও কিছু...! তাই সে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলছে। বাথরুমে ঢুকেছে বিদেশী কোম্পানির দামি সাবান নিয়ে। বিলাস এ সাবান দিয়েছে তার নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের জন্য চার হাজার টাকার বিনিময়ে পাওয়া কসমেটিক্স ভরা কিটস থেকে। কোম্পানির নির্দেশ আছে-আগে নিজে বাড়িতে ব্যবহার করুন। পড়শি, আত্মীয়স্বজনের ঈর্ষার কারণ হোন। তারপর অন্যকে বিক্রি করুন। সেই সাবান মাখছে তার শরীরে, অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে। এতে নাকি ত্বক হবে আরও উজ্জ্বল ও মাখনের মতো নরম। বাথরুমটা সাবানের গন্ধে ভরপুর। প্লাস্টার চটা, মাকড়শার জাল, বিছানো বাথরুমটা কী করে যে সাদা ধবধবে টাইলসে সেজে উঠেছে। দেওয়ালে বিশাল এক আয়না। পুরো শরীর ধরা পড়ে ওতে। এটাইবা এলো কোত্থেকে। যাকগে, ওসব ভাবার সময় এখন বিনতার নেই। সে তার নিরাবরণ শরীরটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আয়নায়। নিজেকে দেখে উৎফুল্ল সে। আগের চেয়ে হঠাৎ কী করে সে আরও সুন্দর হয়ে গেছে। থুতনির নিচে কী সুন্দর ছোট্ট একটা ঢেউ! আগের চেয়ে আরও ভারি হয়েছে বুক। কোমরে ছোট্ট-ছোট্ট দুটো ভাঁজ। মনের মাঝে কখনো বিলাস কখনো গোরাদা! গোরাদা তাকে দেখলেই কত রূপের প্রশংসা করে। অথচ বিলাসের রূপ দেখার সময় নেই। সে সারাদিনই বাইরে। ট্যুইশনি-স্কুল-কোচিং সেন্টার। ছুটির দিনে কসমেটিক্স ভর্তি ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়ে। দু’ বছরের মধ্যে বাড়ি-গাড়ি করবেই সে। তখন নতুন বাড়িতে বিনতাকে রাণী করে রাখবে। নতুন গাড়ি চড়িয়ে গঙ্গার ধারে হাওয়া খেতে নিয়ে যাবে। তাই এখন তার কথা বলারও ফুরসত নেই বিনতার সঙ্গে। শুধু রাত্রিবেলায় যা...! বিনতার রূপচর্চার শেষ পর্ব চলছে এখন বিলাসের এনে দেওয়া পছন্দসই দামি লিপস্টিকের ছোঁয়ায়। তারপর সে সারা গায়ে ছিটিয়ে নেয় বিদেশী বডি-¯েপ্র মিন্ট। বিলাস বলে এর গন্ধটা খুবই কামোত্তেজক। এমন মাদকতা এর গন্ধে, যে কোনো পুরুষকে কাবু করে দিতে পারবে। আজ বিনতা এর প্রমাণ পেতে চায়। ওই যে দরজায় খটখট শব্দ। বোধহয় গোরাদা এলো। শব্দটা এবার বেশ জোরে। বিনতার ঘুম ভাঙে। কানে আসে কাজের মেয়ে ডলির ডাক - ও বৌদি। এখনও জাগোনি। ঘুম ভাঙতে এত দেরি তোমাদের!
এখনো সূর্য ওঠেনি। পূব-আকাশে লালচে আভা। বিলাস ভোরে ওঠেনি বহুদিন। সূর্য উঠা কতদিন দেখেনি। ওর আজ সূর্য উঠা দেখার ইচ্ছে হয়। কিন্তু ওর মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বিনতার স্বপ্ন। আচ্ছা বিনতা কি সত্যিই এ রকম? সে কি সত্যিই ওই নচ্ছার গোরাটার সঙ্গে মাখামাখি করছে তার ঘরে না থাকার সুযোগ নিয়ে। আচার ব্যবহারে তো কিছু বুঝা যায় না। যেনো খুবই ‘পতিব্রতা’ নারী। স্বামীর সুখ-সুবিধার জন্যই সে সারাটা দিন ব্যস্ত থাকে এমন ভাবখানা তার! মনের মধ্যে যেসব চিন্তা ঘুরে বেড়ায় সেগুলোই স্বপ্নে আসে বলে শুনেছে। তাহলে বিনতা নিশ্চয় কখনো-সখনো গোরার কথা ভাবে। স্বপ্নটা সে গোরাকে নিয়ে দেখছিলো এটা ঠিক। এ তার নিজের মনের বিকৃত ভাবনা নয়। কেননা শুধু বিনতার স্বপ্ন নয় বাড়িওয়ালা গুহবাবু কিংবা কাকলির মায়ের মনের কথাও সে জানতে পেরেছে স্বপ্নের গুণে। নাঃ, সূর্য রোজই উঠবে। যেদিন হোক দেখলেই চলবে। বিনতাকে আজ একটু বাজিয়ে দেখে নেওয়া যাক, এই ভেবে বিলাস পার্ক থেকে উঠে পড়ে।
বিনতা বিলাসকে বিছানায় না দেখতে পেয়ে ভেবেছিলো বাথরুমে গেছে। ডলির ডাকে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজার খিল খোলা। তাহলে বিলাস নিশ্চয় বাইরে বেরিয়েছে। কিন্তু এত সকালে কোথাও তো যায় না! বিশেষত তাকে না বলে বেরোনো এই প্রথম। বিনতা কিছুটা চিন্তায় পড়ে। ডলিকে শুধায় - কী রে তোর দাদাবাবুর সঙ্গে রাস্তায় দেখা হলো? ডলি তার স্বভাবগত ভঙ্গিতে উত্তর দেয় - কী করে দেখা হবে? দাদাবাবুর রাস্তা আর আমার রাস্তা কি এক? আমি এ বাড়ি ও বাড়ির পাশ দিয়ে, গলিঘুঁচি দিয়ে...! বিনতা হালকা ধমক দেয়, থাম। তুই বড্ড বেশি বকিস। ডলি বিনতার গলার স্বরে মনের ভাবগতিক বুঝে চুপ করে যায়। প্রতিদিন সকালটা এক নির্দিষ্ট ছকে চলে বিনতার। আজ কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে। এই সময় সে চা বানিয়ে. বিছানায় বিলাসকে এক কাপ আর ডলিকে এক কাপ দিয়ে বারান্দায় গ্রিলের ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আয়েস করে চা খায়। চা খেতে খেতে দেখে আস্তাকুঁড়ে কাকেদের লড়াই, আকাশে উড়ন্ত সঙ্গহীন চিল কিংবা সামনের বাড়ির খোলা জানালা দিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা গা-উদোম মানুষটাকে। শোনে ময়লা ফেলা ঠেলাগাড়ির ঘর্ঘর শব্দ, দূরে কারখানার সাইরেন কিংবা বাড়িওয়ালার বাথরুম থেকে ভেসে আসা গোরাদার বেসুরো গান। আজ সে চা বসায়নি। ডলিও কাজে ধরতাই পাচ্ছে না। রোজ সে দরজার চৌকাঠে বসে চা আর একটা টোস্ট খেয়ে, তিনজনের কাপ তুলে নিয়ে বাসন মাজতে বসে। সে আজ এখনো বাসন মাজা শুরু করেনি। একটু উসখুস করে ডলি বলে - কী গো বৌদি আজ এখনো চা বসালে না! মন ভালো নেই বুঝি! দাদার সঙ্গে কিছু হয়েছে নাকি গো? ডলির কথা না শোনার ভান করে বিনতা গ্যাস জ্বেলে চা বসায়। আজ একটু অন্যমনস্ক সে। কেনো যেনো হঠাৎ তার মনে পড়ছে বিয়ের পর প্রথম দিকের দিনগুলোর কথা। শ্বশুর, শাশুড়ি, আইবুড়ো ননদ। ভোর হতে না হতে গৃহস্থালি কাজ, শ্বশুরের ফরমাইশ, শাশুড়ির সাংসারিক জ্ঞান দেওয়া। কী বিতিকিচ্ছি ছিলো সে দিনগুলো। তার মোটেই ভালো লাগতো না। একটু অন্য রকম কাটতো শনিবার সন্ধ্যে থেকে রবিবার সারাটা দিন। সপ্তাহ শেষে বিলাসকে নতুন নতুন লাগতো তার। অনেক বাদ-বিসম্বাদ, মান-অভিমান ও অনেক নাটকীয় ঘটনার পর এই ভাড়াবাড়িতে চলে এসে সে যেনো হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলো। কিছুদিন পরেই অবশ্য তার খারাপ লাগা শুরু হয়েছিলো এখানে। বিলাস ঘরে থাকতে দু’ একটা কথা কিংবা ডলির বকবকানি থামাতে কিছু কথা খরচ করা ছাড়া সারাটা দিন মুখ বুজে একা একা। আজ যেনো হঠাৎ সেই খারাপ লাগাটা বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে প্রথম দিকের সেই দিনগুলোই বোধহয় ভালো ছিলো। কখনোও একা হওয়ার সময় পাওয়া যেতো না। এখানে বিলাস সারা দিনই বাড়ির বাইরে। এখন তো কী এক চেন সিস্টেমের ব্যবসাতে নেমে রাতেরও কিছুটা সময় বাইরে কাটায়। প্রতিবেশী মেয়ে কিংবা বৌগুলোর চোখে চোখ রেখে দেখেছে - সে চোখে কোনো ভাষা নেই। নির্বিকার, অচেনা কিংবা অবাঞ্ছিত। একদিন হঠাৎ বাড়িওয়ালার ছেলে কী এক দরকারে বিলাসের খোঁজ করেছিলো - বৌদি দাদা ঘরে নেই? বোধহয় এখানে আসার পর তার উদ্দেশ্যে অজানা পুরুষের কণ্ঠ শুনেছিলো সেই প্রথমবার। হঠাৎ সে উচ্ছল হয়ে উঠেছিলো। ইচ্ছে করেই একটু বেশি সময় কথা বলেছিলো গোরার সঙ্গে, যার গলার বেসুরো গান রোজ সকালে চা খেতে খেতে শোনে। গোরাও তাকে কিছুটা সময় দিয়েছিলো কিংবা তার শরীরটা জরিপ করতে কিছুটা সময় নিয়েছিলো। বিনতা খুশি না হলেও অখুশিও হয়নি। তারপর কখনো-সখনো গোরা দু’-একবার কথা বলেছে - কী বৌদি ভালো আছেন? কিংবা বাঃ, দারুণ লাগছে তো আজ আপনাকে। প্রথম দিন একটু বেহিসেবি হলেও পরে কখনো গোরার সঙ্গে কথা বলতে সে হিসেবি হয়েছে। গোরাদার চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছে। ব্যস, এটুকুই। এর বেশি কিছু নয়। তবুও গোরাদার কাছে সে একটা ব্যাপারে কৃতজ্ঞ, গোরাদা তার একাকীত্বের স্থির জলে ঢিল ছুঁড়ে যেনো জলটাতে ছোট্ট ঢেউ তুলে দিয়েছে। সেই গোরাদাকে নিয়ে কেনো যে আজ এসব স্বপ্ন দেখলো, সেটাই তার মাথায় আসছে না। কোনোদিন সে জ্ঞানত এসব কথা ভাবেনি। ভাবতেও চায় না। তার গ্রামে বেড়ে ওঠা জীবনের চিন্তা ভাবনায়, মানসিকতায় এটা পাপ। কিছু না করলেও শুধু স্বপ্ন দেখাটাই তার মনে পাপের কাঁটা ফোটাচ্ছে। সেই জ্বালাটাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে ভোর বেলায় কিছু না জানিয়ে বিলাসের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া। কত সাত-পাঁচ চিন্তা তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
ডলি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুখ বেঁকিয়ে বলে - এমা! বৌদি তোমার আজ কী হয়েছে বলো তো! চা বসাতেই মনে ছিলো না। যদিওবা চা করলে চিনি দাওনি চায়ে। আরে বাবা! ঘটি-বাটি একসাথে থাকলে ঠোকাঠুকি হয়। মানুষ তো দু’জন। ঝগড়া মানেই জানবে ‘পেরেম’ জমবে ভালো।
বিনতা এক চামচ চিনি ডলির কাপে চামচসহ ঠকাস করে ডুবিয়ে দিয়ে বলে - আঃ! ডলি কী হচ্ছে, কী শুধু বকরবকর! তোকে কে বলেছে তোর দাদাবাবুর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে? চা খেয়ে নিজের কাজ কর। বিনতা ভাবতে থাকে, সে নিজেই ডলিকে মাথায় তুলেছে। প্রথম প্রথম ডলি চুপচাপ কাজ করে চলে যেতো। ডলি বিকেলে বাসন ধুতে এলে বিনতা নিঃসঙ্গতা কাটাতে ওর সাথে এটা ওটা কথা বলা শুরু করায় ওর বাচালতা বেড়ে গেছে।
বিলাস পার্ক থেকে সোজা বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়। এখন তার মনজুড়ে বিনতা আর গোরা! আচ্ছা বিনতা স্বপ্নে বলেছিলো - ‘গোরাদা। তুমি আর আসো না তো! আগে মাঝে মাঝে আমার ঘরে চলে আসতে।’ সত্যিই কি গোরা তার ঘরে আসে ওর না-থাকার সুযোগ নিয়ে! বিনতা কোনোদিন এ কথা বলেনি। একদিন শুধু ওর খোঁজে গোরা বিনতার সঙ্গে কথা বলেছিলো, সেও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। এ কথা বিনতা তাকে বলেছিলো। তারপর কি গোরার সঙ্গে মাখামাখি বেড়েছে! সে রকম হওয়ার কথা নয় অবশ্য। এতদিনে বিনতাকে সে যা বুঝেছে...। আসলে গোরা ছেলেটা সুবিধের নয়। ওর উলুক-ঝুলুক স্বভাব আছে বলে শুনেছে। কিন্তু এমনিতে ও যথেষ্ট ভদ্র। তার সঙ্গে সম্মান দিয়েই কথা বলে গোরা। ওকে যদি এখন সে দেখতে পেতো তাহলে ভালো হতো। ওর মনের কথাগুলো জানতে পারতো। ঠিক আছে, কিছুক্ষণ পরই গোরা বেরোবে বাড়ি থেকে। তার আগে বিনতার মনের ভাষাটা একটু পড়ে নেওয়া যাক।
ডলিকে চা দিয়েছে, কিন্তু নিজের জন্য কাপে চা ঢালেনি বিনতা। সে অপেক্ষা করতে থাকে বিলাসের জন্য। নিশ্চয় বিলাস কাছেপিঠে কোথাও গেছে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের ব্যাগটা তো নিয়ে বেরোয়নি যে দূরে কোথাও যাবে। ট্যুইশন করতে বেরোনোর সময়ও হয়ে এলো। ওই ঘোড়ার ডিম সাবান, সাবানের ব্যবসাটা শুরু করার পর থেকে ট্যুইশনটাও মাঝে মাঝে কামাই হচ্ছে। ‘ব্যবসা’ বললে ওঁর আবার রাগ হয় - বলে এটা ব্যবসা কে বলেছে? এ হলো এক বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির মেম্বারশিপ নেওয়া। কোনো জিনিস বিক্রি না করলেও চলবে। শুধু তিনজন সদস্য বাড়াতে হবে। আমার দায়িত্ব শেষ। এবার তারা সদস্য বাড়াবে। আামি ঘরে বসে কামাবো। তুমি দেখো না বিনু, দু’ বছরের মধ্যে আমি ভাড়া-বাড়ি ছেড়ে দেবো। নিজের বাড়ি হবে। চাই কি দু’ চাকাও... বলে খ্যাক-খ্যাক করে হাসে। হাসি থামিয়ে বলে - আমি কি এতোই বোকা, ‘চেন’-এ তিনজন নামিয়ে গায়ে হিমজল ঢেলে বসে থাকবো। কোম্পানি থেকে বেশি-বেশি মাল তুলবো। এত বাড়িতে ছেলেমেয়ে পড়াই। তাদের বাড়িতে দু’-একটা করে পুশ করলেই কমিশন প্লাস একস্ট্রা লাভ। বিলাসের চোখে ঝিলিকের কথা মনে পড়ে যায় বিনতার। বিনতার তখন সেটা দেখে ভালো লাগেনি। বিলাস যতোই বলুক - ব্যবসা নয়। এটা তো আসলে ব্যবসাই। ব্যবসা তার কোনোদিনই পছন্দ নয়। বর্ধমানের এক বড় ব্যবসায়ী পাত্রকে সে বাতিল করে বাবার মনে দুঃখ দিয়েছিলো। বিলাসকে অবশ্য এসব কথা বলেনি। বলেছিলো - তুমি শিক্ষক, তোমার আলাদা একটা সম্মান আছে। ওদেরকে এসব বিক্রি করতে গেলে ওদের চোখে তুমি ছোট হয়ে যাবে গো! মুখে কিছু না বললেও ওরা তোমাকে আগের মতো সম্মান দেবে না। আর আমাদের এত টাকার দরকারইবা কী! সরকারি স্কুলে চাকরিটা আছে। দু’ বেলা ট্যুইশনিও করছো। আমাদের ছেলেপুলেও হয়নি এখনো। বিলাস মুখ ঝামটা দিয়েছিলো - তুমি থামো তো! হয়নি বলে কি আর হবে না? নিইনি তাই হয়নি। শহরে ছেলে মানুষ করার খরচ জানো? আর ভাড়া-বাড়িতেইবা কতোদিন থাকবো? এই তো সামনের মাসে এগ্রিমেন্ট শেষ। আবার অ্যাডভান্স দিতে হবে তারপর রি-এগ্রিমেন্ট। মাসে মাসে হাজার টাকা ভাড়া গোনা তো আছেই। আজকালকার দিনে ওসব সম্মান-টম্মানের কোনো মূল্য নেই, বুঝলে? আসল জিনিস হচ্ছে টাকা। যার টাকা আছে তার সম্মান আছে। বিনতা চুপ করে গিয়েছিলো। মনে মনে বলেছিলো - তোমাকে কী করে বুঝাবো যে, আমাদের গ্রামে কোনো অনুষ্ঠান হলে গ্রামের মানুষ আমার বাবাকে সম্মান দেখিয়ে সভাপতি করে নিয়ে যায়, পেনশন না-পাওয়া গরিব রিটায়ার্ড শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও। অথচ গ্রামের সবচেয়ে পয়সওয়ালা বরেণ দত্ত সেই অনুষ্ঠানে সাধারণ শ্রোতা হয়ে সামনে সারি দেওয়া বেঞ্চিতে বসে বাবার ভাষণ শোনেন। শুধুই টাকাই সবকিছু নয়। সেই টাকার পিছনে ছুটতেই কি বিলাস ভোরবেলা কোথাও বেরোলো? নাকি অন্য কোনো কাজে। এসব ভাবতে ভাবতে বিনতা চায়ের কেটলিটা আবার গ্যাসে বসায়।
দরজায় খটখট শব্দ। ওই বুঝি বিলাস এলো। বিনতা ছুটে গিয়ে দরজা খোলে। না - বিলাস তো নয়। বারান্দায় একজন অচেনা যুবক। বিনতা দু’ পা পিছোয়। যুবকের ভারি গলা - স্যার আছেন?
- না একটু বেরিয়েছেন। কিছু বলতে হবে?
- বেরিয়েছেন? আমাকে সকালে এই সময়ে স্যার আসতে বলেছিলেন।
- কিন্তু উনি তো... আচ্ছা আপনার নাম?
- আমি প্রলয়। প্রলয় গুপ্ত। স্যার আমার ভাইকে পড়ান।
গলাটা চেনা মনে হতে ডলি দরজার সামনে আসে। প্রলয়কে দেখে বলে - ও গুপ্তবাবুর ছেলে। আমি ওদের বাড়িতেও কাজ করি। কী গো প্রলয়দা কী ব্যাপার?
- ও ডলি, তুই এখানেও কাজ করিস! আমি স্যারের সঙ্গে একটু...।
বিনতা বলে - আপনি ইচ্ছে করলে অপেক্ষা করতে পারেন। এখুনি এসে যাবে হয়তো! প্রলয় দরজার বাইরে জুতো খুলে ঘরে গিয়ে বসে। বিনতা কেটলি থেকে এক কাপ চা ঢেলে প্রলয়কে দেয়। প্রলয় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে থাকে ঘরের ভিতর কালার টিভি, ফ্রিজ, আলমারি, বইভর্তি র্যাক এবং মাঝে মাঝে আড় চোখে বিনতাকে।
বিলাস বারান্দায় উঠেই চমকে ওঠে। দরজার সামনে এক জোড়া জুতো। ছেলেদের। কে আবার এলো সাত সকালে। ভোরবেলায় সে যখন বেরিয়ে গেছে তখন বিনতা ঘুমাচ্ছিলো। এর মধ্যে তার না থাকার সুযোগে বদমাইস গোরাটা ঢুকেছে নাকি ঘরে! তা যদি হয় তাহলে দুটোকেই আজ ‘মার্ডার’ করে ফেলবে, তারপর যা আছে কপালে। দরজায় কড়া নাড়তে গিয়েও বিলাস থেমে যায়। দরজার ফুটোতে কান লাগায়।
বিলাস না আসায় বিনতা নিজের কাপে চা ঢেলে নেয়। ঘরে ঢুকে বিছানায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রলয়কে জিজ্ঞেস করে - আপনি কী করেন? প্রলয় হালকা হাসে তেমন কিছু করি না। বেকারই ধরতে গেলে। তাই স্যার বলেছিলেন কী একটা ব্যবসার কথা বলবেন। প্রচুর লাভও আছে নাকি! ও ব্যাপারেই আমাকে আজ আসতে বলেছিলেন।
বিলাস শুনতে পায় ঘরের ভিতর পুরুষ কণ্ঠ। তার মনে যেনো আগুন ধরে যায়। দরজায় কড়া নাড়ে খুব জোরে, খটখট-খটখট! বিনতা চায়ের কাপ হাতে এসে দরজা খোলে, বিলাসকে দেখে তার চোখে একরাশ প্রশ্ন। বিলাসের চোখে আগুনের ফুলকি। বিনতাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হুড়মুড় করে ঘরে ঢোকে সে। প্রলয় ততক্ষণে চায়ের কাপ রেখে উঠে দাঁড়িয়েছে।
- গুড মর্নিং স্যার।
বিলাসের মুখে কোনো কথা বেরোয় না।
- স্যার আপনি আমাকে আসতে বলেছিলেন সকালে।
বিলাস নিজের মধ্যে নিজেকে ফিরে পায় যেনো! বলে - হ্যাঁ বসো, কতক্ষণ এসেছো?
- এই মিনিট পাঁচেক হলো।
বিলাসের মনে পড়ে যায় নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের চেনে প্রলয়কে নামতে কনভিন্স করার জন্য ওকে আসতে বলেছিলো।
বিনতা বিলাসের ব্যবহারে চমকে ওঠে। এমন তো কখনো করে না। সে হতভম্ব হয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। প্রলয়কে ঘরে বসতে বলায় ও কি রাগ করেছে? নাকি অন্য কোনো সমস্যা? দেখেও কেমন-কেমন লাগছে! বিলাসকে চা দেওয়ার কথাও ভুলে যায় বিনতা। বিলাস প্রলয়ের দিকে তাকায় পূর্ণদৃষ্টিতে। ওকে নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য প্রস্তুতি নিতেই হয়তোবা। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। প্রলয়ের মনের মাঝের ভাবনাটা ওর মাঝে চলে আসে - বাঃ, মাস্টার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও মালদার পার্টি আছে। ঘরে কালার টিভি, ফ্রিজ, মিউজিক সিস্টেম কী নেই! বৌটাও খাসা। সরেস জিনিস। দেখি কী ব্যবসার কথা বলে মাস্টার! যাই হোক লটকে যাবো। তাহলে পিসটাকে মাঝে মাঝে মাপা যাবে। ওর হাতের মিষ্টি চায়ের কাপে চুমু খাওয়া যাবে। খেলোয়াড় তো আমি কম পাকা নই। তেমন তেমন সিগন্যাল পেলে...।
বিলাসের রগের শিরা ফোলে। হাতের মুঠি শক্ত হয়। চোখদুটো যেনো বাঘের চোখ। সহসা সে চিৎকার করে ওঠে - বেরিয়ে যাও ঘর থেকে। প্রলয় চমকে ওঠে। বিনতা ভয় পায়। ডলি কলঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে।
- কী হয়েছে বৌদি? দাদাবাবু রাগারাগি করছে কেনো?
বিনতা আস্তে আস্তে নিজের মনেই যেনো বলতে থাকে - কী জানি - মানুষটার কিছু গ-গোল হলো কি না - ঠাকুর এ তুমি কী করলে! প্রলয় দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে মাস্টারকে দেখে হয়তোবা ভয় পেয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বিলাস হঠাৎ তার নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়।
বিনতা ও ডলি একে অপরের দিকে চেয়ে চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করে।
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
খুব খুব খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন