শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

গল্প >> অযাচিত দ্রষ্টব্য : আশরাফ উদদীন আহমদ

অযাচিত দ্রষ্টব্য

আশরাফ উদদীন আহমদ

নয়ানজুলির ধারে এসে একটু দাঁড়ালো বারেক মুন্সী। ওপাশের ঝাঁকড়া অশথ গাছটার দিকে তাকিয়ে আবার হাঁটতে থাকে পুরোদমে। সন্ধ্যার অস্পষ্ট আলো আঁধারের মধ্যে দ্রুত পা চালিয়ে বোরজান কাজীর চায়ের দোকানে হাজির হয় এক সময়। নওহাঁটা বাজারের ঠিক দক্ষিণ পাশের মস্ত লোহার ভাঙা ব্রিজের পূর্বমুখো বোরজানের রুজি রোজগারের ঠিকানা। সামনের টানা বেঞ্চে বারেক মুন্সী বসে পড়ে। সপ্তাহে দু’ দিন হাট বার, তাছাড়া প্রতিদিন বাজারে লোকের সমাগমে ভরপুর অবস্থা। নিরিবিলি পরিবেশ কখনো থাকে না তেমন। হৈ-হট্টগোল আর বিভিন্ন দোকানের রেডিও-ক্যাসেট আর টেলিভিশন গান বাজনা নাটক-ফাটকের সংলাপে মেতে থাকে। মোষের খাঁটি দুধের চা খাওয়ার জন্য প্রতিদিন বিকেলের ঠিক পরপরই জমজমাট হয়ে ওঠে বোরজান কাজীর দোকান। বাঁশের  মজবুত বাখারি দিয়ে দু’ দিকে শক্ত করে বসার জন্য বেঞ্চ করা, খুঁটিগুলো ভারি পাকা বাঁশের। বেশি লোকের ঠাসাঠাসিতেও নড়চড় বা ভেঙে পড়ার তেমন একটা সম্ভাবনা নেই। পা ঝুলিয়ে বসে রাজ্যের গাল-গল্প পরামর্শ, পরচর্চায় মেতে ওঠে মানুষজন।
বারেক  মুন্সীর  আগমনে মুহূর্তে উপস্থিত সবাই যেনো একটু নড়েচড়ে উঠলো। কয়েকদিন কেনো এদিকে আসেনি জানতে চাইলো বোরজান। বারেক মুন্সী ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি চড়িয়ে এড়িয়ে যায় প্রশ্নটা। চোখ পড়ে বেঞ্চে বসে থাকা নয়াবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিবুদ্দির দিকে। চোখে চোখে কথা হয় দুজনের। অপর দিকে বেঞ্চে বসে পরচর্চার ¯্রােতে গা ভাসায় বারেক মুন্সী। ধীরে ধীরে বিকেলের আলো ফুরোতে থাকে। এক সময় বারেক মুন্সীকে চোখের ইশারায় কাছে ডাকে আজিবুদ্দি। ততোক্ষণে চারদিক ছেয়ে ফেলেছে সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার। দোকানে দোকানে জ্বলতে থাকা বাতিগুলো বড় বেশি আলো ছড়াচ্ছে এখন। যাত্রাদলের নায়িকাদের মতো রূপ-জৌলুশ দিয়ে যেনো কাছে টানতে চাইছে ক্রেতাদের। 

বারেক মুন্সী আর আজিবুদ্দিন কী এক খোশ গল্পে নাকি সিরিয়াস কথায় আটকে যায় অনেকক্ষণ। কী নিয়ে এতো ফিসফিসানি তা বোঝার সাধ্য কারো নেই। বোরজানের দোকান এখন অনেকটা হালকা, রাত্রি ক্রমে-ক্রমে নামায় মানুষজনও শূন্য হতে থাকে। হঠাৎ ছন্দপতন ঘটায় দেবদুলাল প-িত। দোকানের এক কোণ থেকে হাঁক ছাড়ে সে, বারেক এবার আলুর দাম কতো উঠলো... 
প-িতের কণ্ঠে আড় চোখে তাকায় আজিবুদ্দি। বারেক কথাটা তেমন একটা পাত্তা দেয় না বোঝা যায়। নিজেদের মধ্যে আগের মতোই কথা চলতে থাকে। আজিবুদ্দি বলে চলে, হাওয়া সব সময় এক রকম বয় না। খুব ভাইবা চিইন্তা পা ফেলবা। পথে পথে কাঁটা আর কাঁটা। বারেক মুন্সী ইঁদুরের মতো কান খাড়া রেখে পরামর্শ শোনে তারপর একসময় বলে, এখন পরিস্থিতি খানিকটা ভালো। তয় খারাপ হইতেও তো বেশি সময় লাগে না! 
আজিবুদ্দিন দূরের অন্ধকারকে তীব্রভাবে লক্ষ্য করে বলে, আজকাল আন্ধারেও ভয়, দিনেদিনে অবস্থা কেমন জটিল হইতাছে। কওন যায় না কে কোনখানে ঘাঁপটি মাইরা আছে। কে জানে... 
আবার প-িত বললো, নওহাঁটা-বায়াঁ-কেশরহাট-মোহনপুর-বাঘমারা-তানোর সাইডে আলুর দাম কতো উঠেছে ...। দেবদুলাল প-িতের প্রশ্নে মাঝামাঝি কথার তার ছিঁড়ে যায় যেনোবা। আজিবুদ্দি কী একটা অশ্লীল খিস্তি দিতে গিয়ে নিজেকে সামলে নেয়। বারেক মুন্সী চাপা স্বরে বলে, বুড়ো বয়সে প-িতের ভীমরতি হয়েছে, কী বালের খবর নিতে চায়...। ভাগ্যিস দেবদুলাল প-িত কানে খাটো। তাই একটু ভরসা, নয়তো এভাবে প্রকাশ্য খোলা দোকানে বসে কি আর এভাবে গোপনীয় কথা-শলা পরামর্শ করা সম্ভব হতো।
আজিবুদ্দি ও বারেক মুন্সী ফিরে আসে নিজেদের কথার ভুবনে। ছেঁড়া কথার সুর ধরে আজিবুদ্দি  বলে, নমিতা মাসী যতোদিন বাঁইচা আছে, আমাদের বিপদ নাই। শালী পারে না এমন কিছু দুনিয়ায় নাই। ওকে সাইজ কইরাই কাজ হাতাইয়া নিতে হইবো। 
বারেক মুন্সী আলো আধাঁরির মধ্যে মিচকি হাসি ছড়িয়ে বলে, মাসী হাজার বছর বাঁচুক। মরলে মমি কইরা রাখবো গো...। 

রাতের মিশমিশে কালো অন্ধকার পুরোদস্তর  গ্রাস করে ফেলেছে পৃথিবীকে। পোড়া রুটির মতো আধখানা চাঁদ কিছুক্ষণ আগে ঝুলে থাকলেও এখন লাপাত্তা। আকাশের গায়ে এখন শিল্পীর রঙের প্রলেপের মতো মেঘের আবরণ, ছিঁটে-ফোঁটার মতো আঁকিবুঁকি। ওদিকে পানের বরোজ আর বাঁশঝাঁড়ের ভেতর থেকে শিয়ালের চিৎকার ভেসে আসছে। শ্রাবণের  আকাশকে কোনো বিশ্বাস নেই। এই ভালোর ভালো তো এই মুখ ভার করে ঝমঝমিয়ে কেঁদে কেটে সারা করবে। কয়েকদিন ধরে অবিরাম বারি বর্ষণ চলছে। আজ সকালের দিক থেকে একটু হালকা হলেও এখন আবার আকাশের মুখ কেমন কেমন যেনো। পূব আকাশটাকে বড় ভয় লাগে। গায়ে একটু শীতল বাতাস ধাক্কা দিচ্ছে।
রাত বাড়ছে। লোকজন আস্তে ধীরে চায়ের স্টল থেকে চলে যেতে থাকলেও বারেক মুন্সী আর আজিবুদ্দি দুজনে এখনও আলাপে মশগুল। কথোপকথনের স্বর নিচু হতে হতে কানাকানির পর্যায়ে এসে নেমেছে। তাদের আলাপচারিতা ওরা ছাড়া আর কারো বুঝার বা আন্দাজ করার সাধ্য নেই। দুজনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে এমনভাবে বসেছে ফাঁক দিয়ে হাওয়া গলারও উপায় নেই। আকাশের  মন ভারি খারাপ, যে কোনো মূহূর্তে কান্না শুরু হতে পারে। দোকান বন্ধ করার একটা তাগিদ অনুভব করে বোরজান। কিন্তু আলাপরত দুজনকে কিছু বলার সাহস নেই। আজিবুদ্দি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। বারেক মুন্সীও যে-সে  মানুষ নয়। দুজনের চরম ক্ষমতা, দু’ দশ অঞ্চলে ওদের মান্যগণ্য করে।  
বারেক মুন্সী চাপাস্বরে বললো, ঝড়-বৃষ্টির এই শ্রাবণ মাসে তো মঙ্গলই নিয়া আসে। কিন্তু যেইভাবে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হইতাছে। ব্যবসাপাতি আর হইবো না। না খাইয়া মরন লাগবো। 
আজিবুদ্দি যেনো একটু চমকে ওঠে, কীসের অবনতি। সীমান্ত তো শুনছি এখন গড়ের মাঠ, কী সব আলতু-ফালতু...
বারেক মুন্সী কথা কেড়ে নেয়, আরে সেইখানেই তো বিপদ। শালারা ইন্দুর ধরার কলের মতো পথ খুইলা রাখছে। ওদের ফন্দি-ফিকির বেবাকই আলাদা।
আজিবুদ্দিন কাঁচুমাঁচু করে মাথা চুলকায়, তাইলে তো ভাইবা চিইন্তা আগপাছ দেইখাশুইনা পথ চলতে হইবো...।
বারেক মুন্সী হতাশভাবে মাথা নেড়ে বলে, বড় মুশকিলে আছি। লাখ পাঁচেক টাকার কাঁচা চামড়া আর বিদেশী ইলেকট্রোনিক্স মাল পাঠানোর কথা ছিলো। তাইলে আপনার নগদ টাকাটাও...
আজিবুদ্দিন যেনো অন্যমনস্ক সুরে বলে, আগামীকাল সকালে আইসো তো একবার আমার বাড়িতে। একটু থামে। আমার উপর দিয়া অন্যরকম ঝকমারি যাইতাছে। ইনকাম ট্যাক্সের লোকেরা পেছনে লাগছে। ফতুর কইরা ছাড়বো শালারা।
বারেক মুন্সী অশ্রাব্য একটা খিস্তি ঝেড়ে বলে, জান-প্রাণ পানি কইরা ধান্দা করমু। আর ওনাদের বসায়া বসায়া খাওয়ামু।  এইটা আবার কেমন ধারা কথা।
আজিবুদ্দি বলে, এর লাইগাই তো ট্যাকা-পয়সা এখন আর ব্যাংকে-ট্যাংকে রাখি না। সরকারি টিকটিকিরা বড়ই ধুরন্ধর। গন্ধে গন্ধে শালারা খবর পাইয়া যায়। যাউক কাজের কথায় আসি, সাব্বির গাজী-আয়াত কবিরাজ- রহিমা চাচী আর ওই সোহরাব মাঝির চাল-চলন গতি-বিধির একটু নজর নজর রাইখো।
পান বরোজের দিক থেকে ঘন ঘন আসতে থাকা শিয়ালের চিৎকার আড়াল করে ফিসিফিসিয়ে বারেক মুন্সী বলে, ওইপারের ছিদিম গাইন ধুরন্ধর মানুষ বটে। সেও আমারে কয়েকবার এই কথা কইছিলো। কিন্তু আমার মনে হয় না ওরা বিশ্বাসঘাতকতা করবো। তারপরও খেয়াল রাখতে হইবো। আগের বার তো নরেন্দ্রকে ওর সাথের লোকেরাই ধরায়া দিছিলো। 
আচমকা প্রশ্ন করে আজিবুদ্দি, আচ্ছা আমার পার্টনার মিরাজুল ব্যাপারী আর ওপারের যোগেন নন্দীরে কেমন মনে হয় তোমার? গতবারের পঞ্চাশ হাজার ট্যাকা তো এখনো বাকি পইড়া আছে।
হাসতে-হাসতে বারেক মুন্সী বলে, মাইনষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ চেয়ারম্যান সাহেব। যোগেন দাদা সামনের হপ্তাতেই আপনার টাকা পৌঁছায়া দিবো কইছে। যাই বলেন না ক্যান ওরা কিন্তু আপনারে বেশ মান্যিগণ্যি করে।
আজিবুদ্দি গম্ভীরস্বরে বলে, তাইলে তো ভালোই। তয় ইয়াদ রাখবা মুন্সী সরিষার মইধ্যেই ভূত থাকে। 
কথায় সুর মেলায় বারেক মুন্সী, তা তো বটেই। তা তো বটেই..
রাত বাড়ে। শেয়ালের চেঁচামেচি আরো ঘন হয়। উঠে পড়ে দুজনেই। কালো মিশমিশে মেঠোপথ ধরে দুজনে হাঁটতে থাকে। জোনাকি আর অন্যরকম রোশনাই তাদের পথ চিনিযে নিয়ে যায় বাড়িমুখো। দুজনে এখন বেশ গম্ভীর। কারো মুখে এতোটুকু কথা নেই। অন্ধকারের মতো কালো কালো মেঘরাশি কেটে কেটে একসময় তারা আপন গন্তব্যে পথ খুঁজে পায়।

সপ্তাহ খানিক পর এক বিকেলে আজিবুদ্দির বাড়ি হাজির হয় বারেক মুন্সী। সূর্যের তেজী আলো তখনো পুরোদস্তুর মরেনি। পশ্চিমাকাশে একটু-একটু আলো ফেলে দাঁড়িয়ে আছে। বৈঠকখানায় বসে অনেক কথা হয়। বেশির ভাগই ফিসফাস। কথা বারেবার ফিরে যায় সীমান্তের কাঁটাতারের পাশাপাশি। আজিবুদ্দিই কথা বলে, রঘুনাথপুরে বর্ডারের ধারে কানু ম-লের কাছ থাইকা গতবার যে জমি কিনছিলাম মনে আছে। এই জমির বরাবর ওই পারে আলো সুন্দরীর জমি। মাগী তো যাত্রাদলের নাচনেওয়ালী, গতবার পঞ্চায়েতের নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। হেই মাগী এখন তার জমিতে গাঁজার চাষ করতাছে খবর পাইছি। 
বারেক মুন্সী হতভম্ব হয়ে যায় আজিবুদ্দির জ্ঞানের বহরে। গাঁজার চাষ! তাও এক্কেবারে বর্ডারের ধারে। মাগী তো বড় ‘ডেঞ্জেরাস’। 
চেয়ারম্যান শুকনো খটখটে হাসি ছড়িয়ে বলে, আলো সুন্দরী কেমন মাগী তুমি জানো না মুন্সী? মিয়া এপার-ওপার কীসের ধান্ধা করো। 
আজিবুদ্দির বিদ্রুপ গায়ে মাখে না বারেক মুন্সী। প্রশ্ন করে, তা হঠাৎ কইরা আলো সুন্দরীর কথা ক্যান। নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে আপনের।
প্রশয়ের হাসি হাসে আজিবুদ্দি। এর লাইগাই তোমারে ভালোবাসি। আমার মনের কথাগুলান তুমি ঠিকই বুঝবার পারো। মতলব আছে আছে মুন্সী, অবশ্যই আছে। আলো সুন্দরী আমার চোখ খুইলা দিছে। অল্প পুঞ্জিতে বিরাট লাভের ধান্ধা পাইছি। আলোর লগে একটা রফাও হইছে। কানু ম-লের কাছ থাইকা কিনা জমিতে আমিও গাঁজার চাষ করনের কথা ভাবতাছি। ওপর মহলরে শুধু ম্যানেজ করতে হইবো এই আর কী। লাভের কিছু গুড় পিঁপড়ারে তো দিতেই হয়!
চেয়ারম্যানের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে বারেক। চোরাচালানের ব্যবসা ঠিকই করে সে। কিন্তু এমন জীবন-মরণ খেলা খেলবে কোনোদিন ভাবেনি। ভয়ে ভয়ে বলে, কাজটা রিস্কি হইয়া যায় না চেয়ারম্যান সাব।
আজিবুদ্দি দার্শনিকের মতো বলে, রিস্ক ছাড়া খেলায় জিতবা কেমনে তুমি?
নিজের যুক্তিতে আবারও শক্তি দিতে চায় বারেক মুন্সী, কিন্তু আলো সুন্দরী তো সেয়ানা মাল। কখন ফাঁসায়া দিবো। তার উপরে এখন আবার পঞ্চায়তের সদস্য। কাজটা ঝুঁকির হইয়া যায় না চেয়ারম্যান সাব?
রসিকতার সুরে বলে আজিবুদ্দি, আমারে তোমার দুধু খাওয়া গ্যাদা মনে হয়। একটা মাগীর লগেও আমি চাইলে পারুম না। এতো দিনে এই চিনলা আমারে মুন্সী!
লজ্জা পায় যেনো বারেক মুন্সী, না তা কই নাই চেয়ারম্যান সাব। আপনের মতো মানুষ আন্দাজে পাও ফেলে না এইটা জানি। তা কী মতলব আপনের মনে।
হাসে আজিবুদ্দি, এইপার ওইপার দুই পারেই রাজত্ব করতে চাই।  
বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে বারেক মুন্সী, মানে!
বলতে থাকে আজিবুদ্দি, আলো সুন্দরীর লগে একটা সমঝোতা হইছে আমার। আমি তারে এই পারে আশ্রয় দিমু হেয় দিবো ওই পারে। আলো সুন্দরীর সাথে পরামর্শ কইরাই আমি জমি কিনছি। তয়.. একটু থামে। আবার বলে আজিবুদ্দি, ... তয় একখান শর্ত আছে, আলো সুন্দরীরে বিয়া করন লাগবো?
আঁৎকে উঠে বারেক মুন্সী, কী কন চেয়ারম্যান সাব, একটা বাজারের মাইয়ারে আপনি বিয়া করবেন?
পান খাওয়া দাঁত মেলে অদ্ভুত হাসি হাসে আজিবুদ্দি, এইটা ব্যবসার একটা পলিসি মিয়া। আলো ছাড়া আমার ব্যবসা আন্ধার হইয়া যাইবো। 
ভীষণ বাজে রকম একটা গালি বেরিয়ে আসছিলো বারেক মুন্সীর মুখ থেকে। কোনো রকমে আটকে রাখে, তাই বইলা হিন্দু একটা মাইয়ারে...
বারেক মুন্সীর কথা কেড়ে আজিবুদ্দি বলে, মুসলমান বানামু না হেরে? তাছাড়া একটা বিধর্মীরে মুসলমান বানানোও তো পুণ্যের কাজ। এইটা দেখলা না! খালি খারাপ চিন্তা তোমাগো মনে! একটু থেমে ভেতর ঘরের দিকে মুখ ফিরিয়ে হাঁক দেয় আজিবুদ্দি, কই গো আমার ওজুর পানি দেও। মাগরিবের ওক্তো যে চইলা যাইতাছে।
কঠিন একটা কিছু বলার জন্য বারেক মুন্সীর জিহ্বা লকলক করে। কোনো রকমে আটকিয়ে বলে, হ এমন পুণ্যলাভের ভাগ্য কয়জনের হয়! বারেক মুন্সীর কণ্ঠে শ্লেষের সুর আজিবুদ্দি টের পায় কিনা বুঝা যায় না। অথবা টের পেলেও তাতে আজিবুদ্দির কিছু যায় আসে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন