ইতিহাসগত পার্থক্য
ফয়সল অভি
আমার জন্মের দু’মাস আগে মা নানার বাড়ি গিয়েছিল, তার মায়ের আলিঙ্গনে একজন গর্ভবতী প্রসব করলো আজান। আজান মানে আহ্বান, দলে দলে লোক আসলো।
হাতে হাতে জমলো মাটি. গড়ে তোলা হলো স্নেহ। আর ফলবতী ফসল কাটা হলো উৎসবে। সে সময় আনন্দের সংবাদ ছড়াতো সবার কানে কানে এবং মুখে মুখে হাসি আর পানের গন্ধে হতো নাতির মুখ দেখা। আমি বুঝেছি আরো পরে; তখন কোনো আশ্রম ছিল না সবাই লাঙ্গলের আর্দশে বেশ মানবিক।
ঠিক তার সাতাশ বছর পর...। শহরের সবচেয়ে উঁচু স্পিড ব্রেকার সামনে তার চেয়ে আরো আধুনিক সাদা বেডে জন্ম হলো আমার রক্তে প্রথম সূত্রপাত..... আমি হলাম বাবা। কী আশ্চর্য! সর্বোচ্চ স্বরের আজানটা এখানে আহবান হলো না। আগত সময়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ব্যাংকে খোলা হলো একটা একাউন্ট, সাথে আশ্রম থেকে আনা হলো বৃদ্ধ মাকে। কারণ এ সময়ে শিশুটির মা ও বাবা দুজনই কর্মজীবী। কর্মের দায় বয়ে বেড়াতে হবে অগোছালো মাটিকে। কিন্তু কেউ জানে না সেই মাটির বুকে কোনো এক প্রৌঢ় বৃদ্ধা আঙুলের স্রোতে নিয়তই রোপণ করে যায় অতীত। বড় হতে হতে নতুন হয় প্রাপ্তবয়স্ক জেনে যায় নগরের সকল ধারা। একসময় পরিণত নাগরিক আর দিন শেষে অনুভূতির বিষাদগ্রস্ত ভোর। তাই সে কলমের কালি গিলে গিলে জ্ঞানী হয়েছিল তারপর জ্ঞান বিক্রি করে বেঁচে থাকে আর শহরে শহরে নতুন নতুন আশ্রম উদ্বোধন হয়। সাদা মনের মানুষের তালিকা ক্রমশঃ আরো বড় হয়।
অবশেষে আমি আশ্রম থেকে লিখছি, শেষ হতে হতে একদিন সব নিঃশেষ হয়ে যাবে অতঃপর আদম ও হাওয়া থেকে আবার নতুন ইতিহাস। হয়ত এটার নাম ঈশ্বরচক্র যা বরাবরই অখণ্ড।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন